শুক্রবার, নভেম্বর ২১, ২০২৫
spot_img
Homeজাতীয়চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তুচ্ছ ঘটনা ঘিরে রণক্ষেত্র, আহত তিন শতাধিক

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তুচ্ছ ঘটনা ঘিরে রণক্ষেত্র, আহত তিন শতাধিক

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তুচ্ছ ঘটনা ঘিরে শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসীর মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। গত শনিবার রাত থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত চলা টানা এ সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ আহত হয়েছেন তিন শতাধিক ব্যক্তি। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ নগরীর বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ ঘটনায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়াকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এদিকে শেষ খবর অনুযায়ী, সংঘর্ষের পর গতকাল বিকাল ৪টা থেকে ক্যাম্পাস এবং আশপাশে অভিযান শুরু করেছে যৌথ বাহিনী। এ ছাড়া উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চবির পূর্বনির্ধারিত আজকের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এদিকে পরিস্থিতি নিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় হাটহাজারী থানার ওসি আবু মাহমুদ কাউসার হোসেন বলেন, ‘এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে পুলিশ। সংঘর্ষ থেমে গেছে। পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক।’ এর আগে দুপুরে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় মারধর করে মেরে ফেলছে সন্ত্রাসীরা। আমরা রাষ্ট্রের সহায়তা চেয়েই যাচ্ছি অনবরত। কিন্তু তারা আমাদের কথা কানে তুলছে না। এসব হামলা সাধারণ মানুষের কাজ নয়। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হামলা পরিচালনা করা হচ্ছে।’ ঘটনার বিষয়ে জানা গেছে, শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ২ নম্বর গেটের একটি ভাড়া বাসায় প্রবেশ নিয়ে দারোয়ান এবং ছাত্রীর মধ্যে তর্ক হয়। এ পর্যায়ে দারোয়ান ওই শিক্ষার্থীকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করে। এর জের ধরে শিক্ষার্থী এবং স্থানীয়দের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। পরে এ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। রাত সাড়ে ১২টা থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত চলা এ সংঘর্ষে উভয় পক্ষের দুই শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এ সময় মাইকে ডেকে এলাকাবাসীদের জড়ো করে হামলার অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা। ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত ছিল শিক্ষার্থীরা। এ সময় ২ নম্বর গেট সংলগ্ন এলাকায় শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি ও মারধরের গুজব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। মুহূর্তেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন), উপ-উপাচার্য (একাডেমিক), প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টররা হামলার শিকার হন। সংঘর্ষ চলাকালে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে দেখা যায়। মুহূর্তেই উভয় পক্ষের ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলার কারণে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী চলা দফায় দফায় সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। দ্বিতীয় দফার সংঘর্ষের একটি ভিডিও চিত্র হাতে এসেছে বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে- কিছু লোক রামদা দিয়ে কুপিয়ে দুই শিক্ষার্থীকে ছাদ থেকে নিচে ফেলে দেয়। আরেকটা ভিডিওতে আরেকজন শিক্ষার্থীকে ধান খেতে কোপাতে দেখা গেছে। বিকালে এলাকায় আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে অভিযানে নামে সেনাবাহিনী। এ সময় হামলা পাল্টা হামলা এবং ঘরবাড়ি ও দোকানপাট ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থী ও স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় শনিবার রাত থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে মোট ১৪৫ জন ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে চমেক হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৭৭ জন, বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে ৪৩ জন ও ন্যাশনাল হাসপাতালে ২৪ জন চিকিৎসাধীন। তা ছাড়া গুরুতর আহত চবি ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নাইম রহমানকে ন্যাশনাল হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়েছে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, চবির ঘটনায় বিকাল পর্যন্ত মোট ১৪৫ জন নগরের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিশেষ এ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম জেলা এবং সিটি করপোরেশন এলাকার সব চিকিৎসক, নার্স, স্বেচ্ছাসেবী ও অন্যান্য চিকিৎসাসেবা কর্মীদের কাছে আহ্বান জানাব।

যে নারীকে ঘিরে ঘটনা : যে নারীকে ঘিরে ঘটনার সূত্রপাত তিনি চবি দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তিনি ঘটনার সূত্রপাতের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘সময়মতো প্রতিদিন আমি ভাড়া বাসায় আছি। শনিবারও ১১টা ৩০ মিনিটের মধ্যে চলে আসি। বাসায় এসে দারোয়ানকে দরজা খুলতে বললে তিনি খুলছিলেন না। পরে জোরে ডাক দিলে তিনি অকথ্য ভাষায় গালাগাল দেন। আমি জবাব দিতে গেলে হঠাৎ আমাকে চড় মারেন। এরপর আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন এবং লাথি মারতে থাকেন। আমি আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে আমার রুমমেট ও আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসেন।’

১৪৪ ধারা জারি : শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় এলাকাবাসীর সংঘর্ষের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন। যা আজ (সোমবার) দিবাগত রাত ১২ পর্যন্ত বহাল থাকবে। গতকাল বেলা তিনটার দিকে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়- উপজেলাধীন ফতেপুর ইউনিয়নের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট বাজারের পূর্ব দিক থেকে রেলগেট পর্যন্ত উভয় দিকের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকবে।

কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা বহিষ্কার : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘর্ষের ঘটনায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়াকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ দলের নির্দেশনা অমান্য করে সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপের জন্য তার প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করার কথা জানানো হয় দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে।

যৌথ বাহিনীর অভিযান : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের সংঘর্ষের ঘটনায় যৌথ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বিকাল ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

পরীক্ষা স্থগিত : ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনায় আজ ১ সেপ্টেম্বর (সোমবার) চবির পূর্বনির্ধারিত সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments