ঢাকা সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) বায়ুদূষণ ও যানজট কমাতে ৪০০ ইলেকট্রিক বাস নামানোর উদ্যোগ এখনো অনুমোদন পায়নি। আড়াই হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পটি গত মে মাসে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলেও আট মাস ধরে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। ব্যবসায়িক মডেলের যৌক্তিকতা, ব্যয়–বিশ্লেষণ এবং প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো এখনো পরিষ্কার না হওয়ায় অনুমোদন স্থগিত রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার (বিসিএপি) ফেজ–ওয়ান’–এর অংশ হিসেবে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। মোট ব্যয়ের মধ্যে ২ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা বিশ্বব্যাংকের ঋণ এবং ৩৬৫ কোটি সরকারি অংশ। প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৫ সালের জুলাই থেকে ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত। ঢাকার গণপরিবহন আধুনিকায়ন, যানজট কমানো এবং কার্বন নিঃসরণ হ্রাসই এর মূল লক্ষ্য।
প্রস্তাব অনুযায়ী, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ৪০০ ইলেকট্রিক বাস পরিচালনা করবে সরকার–নিয়োগপ্রাপ্ত অপারেটররা। তিনটি চার্জিং ডিপো নির্মাণ এবং বিআরটিএর ভেহিকেল ইন্সপেকশন সেন্টারসহ কয়েকটি অবকাঠামো তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে।
পরিচালন ব্যয়ের প্রশ্নে মতভেদ
প্রকল্প বিশ্লেষণে দেখা যায়, পাঁচ বছর মেয়াদ শেষে বাসগুলোর পরিচালনা ব্যয় কে বহন করবে—এ নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। সরকার ভর্তুকি দেবে কি না, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। পরবর্তী সরকারের নীতিগত অবস্থানের ওপরও বিষয়টি নির্ভর করবে।
সড়ক ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন জানান, প্রকল্পের ব্যবসায়িক মডেল, খরচ সাশ্রয় এবং ডিপোর অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা চলছে। এতগুলো বাসের জন্য উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন এবং যথেষ্ট বিদ্যুৎ–ব্যবস্থা নিশ্চিত করাও বড় সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে প্রকল্প–প্রস্তুতির কাজ এগিয়ে নেওয়া হবে, তবে চূড়ান্ত অনুমোদন তাঁদের সময়ে হবে কি না তা নিশ্চিত নয়।
বিশেষজ্ঞদের মত
বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হাদিউজ্জামান মনে করেন, প্রকল্প অনুমোদনে দীর্ঘ বিলম্ব সরকারের প্রশাসনিক জটিলতারই প্রতিফলন। শুধু আধুনিক বাস আনা নয়—রুট রেশনালাইজেশন, জমি বরাদ্দ, অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত পরিকল্পনাগুলো সমান্তরালে না এগোলে এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন থেমে যায়।
তিনি মনে করেন, ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে সরকার আগের রুট রেশনালাইজেশন পরিকল্পনাতেই যথেষ্ট অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। পুরোনো গাড়ি সরাতে মালিকপক্ষও বড় বাধা হয়ে রয়েছে।
বুয়েটের আরেক পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সামছুল হক বলেন, ভবিষ্যতে ডিজেল নির্ভরতা কমবে—তাই ইলেকট্রিক বাসের দিকে যাওয়া সময়ের দাবি। তবে চার্জিং অবকাঠামো, সার্ভিসিং, অপারেশনাল কাঠামো—সব আগে প্রস্তুত করতে হবে।
তিনি মনে করেন, শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রকল্প সফল নাও হতে পারে; পরিচালনা ব্যয়ের জন্য বেসরকারি খাতকে অংশীদার করা হলে টেকসই সেবা নিশ্চিত করা সহজ হবে।



