রাজধানীর রায়েরবাজার কবরস্থান থেকে জুলাই আন্দোলনে নিহত অজ্ঞাত ১১৪ জন শহীদের মরদেহ উত্তোলনের কাজ আজ রোববার থেকে শুরু হচ্ছে। ময়নাতদন্ত, ফরেনসিক বিশ্লেষণ এবং ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। আন্দোলনের সময় প্রাণ হারানো মানুষগুলোকে যথাযথ পরিচয় ও সম্মানে ফেরানোর উদ্দেশ্যে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ফৌজদারি তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন খান জানান, ঢাকার একটি আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী উত্তোলনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তাঁর ভাষ্যমতে, রোববার সকালেই কবর থেকে মরদেহ উত্তোলনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে। প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ, ময়নাতদন্ত ও ফরেনসিক পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর মরদেহগুলো পুনরায় মর্যাদার সঙ্গে দাফন করা হবে।
সিআইডির অতিরিক্ত আইজিপি (প্রধান) মো. সিবগত উল্লাহ সকাল সাড়ে ৯টায় রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধসংলগ্ন কবরস্থানে সাংবাদিকদের উদ্দেশে ব্রিফিং করবেন। উত্তোলন কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুই ফন্দেব্রাইডা এবং ফরেনসিক অ্যানথ্রোপোলজির একটি বিশেষজ্ঞ দল মাঠে উপস্থিত থাকবেন বলে জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্তকরণের পুরো প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে পরিচালিত হবে বলে সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ইতোমধ্যে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট কবরস্থানে তাঁবু, আলোকসজ্জা ও বিভিন্ন সরঞ্জাম স্থাপন করেছে, যাতে মরদেহ উত্তোলন, সংরক্ষণ ও নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিচালনা করা যায়।
গত ৪ আগস্ট মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহিদুল ইসলাম আদালতে আবেদন করলে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান ১১৪টি মরদেহ উত্তোলনের অনুমতি প্রদান করেন। আদালতের আদেশে বলা হয়—২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে নিহত অজ্ঞাত শহীদদের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য আইনি প্রক্রিয়ায় মরদেহ উত্তোলন, ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
গত বছরের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিভিন্ন স্থানে নিহত হওয়া ১১৪ জন শহীদকে অজ্ঞাত পরিচয়ে রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়েছিল। আদালতে জমা দেওয়া পুলিশের আবেদনে উল্লেখ করা হয়—ভবিষ্যতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজন হলে মরদেহ তাঁদের পরিবারের কাছে হস্তান্তরের জন্য বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাসহ সঠিক আইনি প্রক্রিয়া অত্যাবশ্যক।
ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ এই উত্তোলন কার্যক্রম আজ শুরু হওয়ায় নিহতদের পরিচয় ও মর্যাদা পুনরুদ্ধারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জিত হলো—এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।



