ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগে অনুষ্ঠিত হওয়ার পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটের এই প্রস্তুতিতে এবার একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে চলেছে কমিশন—দেশের সব কারাগারে থাকা বন্দীরা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন। বিদেশপ্রবাসী, নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীর মতো কারাগারের বন্দীরাও এবার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।
ইসি, কারা অধিদপ্তর এবং জেলা কারাগার–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর কারা কর্তৃপক্ষকে একটি নিবন্ধন লিংক পাঠানো হবে। ওই লিংকে যে বন্দীরা ভোট দিতে আগ্রহী হবেন তাঁদের তথ্য কারা প্রশাসন সংগ্রহ করে এক্সেল শিটের মাধ্যমে ইসিতে পাঠাবে। বন্দীরা যে এলাকার ভোটার, সেই এলাকার প্রার্থীকেই ভোট দিতে পারবেন। এ তথ্য যাচাই করে চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত শেষে ইসি ডাক বিভাগের মাধ্যমে ব্যালট পাঠাবে প্রতিটি কারাগারে।
নির্বাচন কমিশনের গণভোট ও ভোট ব্যবস্থাপনা প্রস্তুতির পাশাপাশি প্রবাসীদের জন্য ‘পোস্টাল বিডি’ অ্যাপ চালু রয়েছে। তবে আইনি হেফাজতে থাকা বন্দীরা অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন না; তাঁদের জন্য থাকবে আলাদা নিবন্ধন লিংক।
ইসির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহর সভাপতিত্বে ৪ ডিসেম্বর কারা অধিদপ্তর ও জেলা কারাগারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি অনলাইন মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কারাগারে ভোটগ্রহণের প্রক্রিয়া, নিবন্ধন কাঠামো এবং ব্যালট পরিবহনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সভা সূত্রে জানা যায়, তফসিল ঘোষণার ১৫ দিনের মধ্যে কারাগারগুলোকে বন্দীদের তথ্য সংগ্রহ করে ইসিতে পাঠাতে হবে। নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর এবং ভোটার নম্বর যাচাইয়ের পর নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত তালিকা পাঠাবে। নির্বাচন শুরুর ৭ থেকে ১০ দিন আগে ডাক বিভাগ ব্যালট পাঠাবে কারাগারে। নির্ধারিত বুথে বন্দীরা ব্যালট পূরণ করবেন এবং ভোট গ্রহণ শেষে চিঠিপত্রের মতো ব্যালটগুলো আবার ডাকযোগে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো হবে। এসব ভোট চূড়ান্ত ফলাফলে যুক্ত হবে।
কারাগারের ভেতরে প্রচারণা নিষিদ্ধ থাকবে। কোনো প্রার্থী বা দলের এজেন্টও রাখা হবে না। বন্দীরা দেশের অনুমোদিত জাতীয় টেলিভিশন ও পত্রিকার মাধ্যমে প্রার্থীদের সম্পর্কে যতটুকু তথ্য জানতে পারবেন, সেই অনুযায়ী ভোট দেবেন। কারাগারে নিবন্ধন করা কেউ যদি নির্বাচনের আগে জামিনে বা সাজা শেষে মুক্তি পান, তবে তাঁরা বাইরে এসে আর ভোট দিতে পারবেন না।
বর্তমানে দেশের ৭৫টি কারাগারে মোট বন্দী সংখ্যা ৭৬ হাজার ৮৫১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৭৪ হাজার ৯৩ জন এবং নারী বন্দী ২ হাজার ৭৫৮ জন। হাজতি বন্দী রয়েছেন ৫৬ হাজার ১৩৭ জন, আর সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি ২০ হাজার ৭১৪ জন। সর্বোচ্চ বন্দী রয়েছে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে—মোট ৯ হাজার ১৬৩ জন।
মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার হুমায়ুন কবীর খান বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা পাওয়া মাত্রই তাঁদের প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু হবে। তিনি জানান, বন্দীদের অনেকেই বিভিন্ন মামলায় হাজিরা দিতে আসা–যাওয়ার মধ্যে থাকেন, ফলে কারা কেউ নির্বাচন পর্যন্ত ভেতরে থাকবেন তা নিশ্চিত নয়। তবে ভোটের সময় যারা কারাগারে থাকবেন তাঁদের নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়া হবে।
কারা প্রশাসনের আরও একটি সূত্র জানায়, ভোটের জন্য প্রতিটি বন্দীকে তিনটি খামযুক্ত ব্যালট দেওয়া হবে এবং নির্ধারিত বুথে ভোট দিতে হবে। ব্যালটগুলো কারা কর্তৃপক্ষ প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্বে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠাবে। বন্দীদের ভোটে অংশগ্রহণ বাড়লেও নিবন্ধনের সংখ্যা সবসময় প্রত্যাশিত হয় না—কারণ অনেকেই নির্বাচন পর্যন্ত কারাগারে থাকবেন কিনা তা নিশ্চিত হতে পারেন না।
কারা অধিদপ্তরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক মো. জান্নাত-উল ফরহাদ বলেন, “নির্বাচনের সময় যেসব বন্দী কারাগারে থাকবেন এবং ভোট দিতে আগ্রহী হবেন তাঁরা সবাই পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন। আগের তুলনায় এবার অংশগ্রহণ বাড়বে বলে মনে হয়।”
ফলে এবারকার সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো কারাগারের হাজারো বন্দী বাস্তবে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন—যা নির্বাচন কমিশনের মতে, দেশের ভোটাধিকার সম্প্রসারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।



