বৃহস্পতিবার, আগস্ট ২১, ২০২৫
spot_img
Homeসারাদেশদাদার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সাংবাদিক তুহিন

দাদার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সাংবাদিক তুহিন

সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ‍্যালয় মাঠে তুহিনের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে দাদার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

এতে স্থানীয় রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও গণ‍্যমান‍্য ব‍্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় বাদ জুমা তুহিনের প্রথম জানাজা শেষে গ্রামের বাড়িতে মরদেহ নিয়ে আসা হয়। নিহত তুহিনের বড় ভাই মো. সেলিম মিয়া এসব তথ‍্য নিশ্চিত করে জানান, দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাদার কবরের পাশে তুহিনকে দাফন করা হয়েছে।

ভাই হত‍্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে সেলিম মিয়া বলেন, আমার ভাইকে বিনা দোষে যেভাবে হত‍্যা করা হয়েছে, এভাবে একজনকে কুপিয়ে হত্যা করা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক।

স্থানীয় নাছির উদ্দিন বলেন, তুহিন খুব ভালো ছেলে ছিল। সত্যিই ভালো মানুষ বেশি দিন বাঁচে না। এটাই প্রমাণ হলো। অল্প সময়ে স্বামী হারিয়ে স্ত্রী মুক্তা আক্তার দুই সন্তান নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন। আমরা চাই সরকার বা রাষ্ট্র তুহিনের পরিবারের পাশে এগিয়ে আসুক।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে গাজীপুর নগরীর চান্দনা চৌরাস্তায় আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা। তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এক ব্যক্তিকে ধাওয়া করেছিল। সাংবাদিক তুহিন সেই দৃশ্য মুঠোফোনে ভিডিও করছিলেন। তখন তুহিকে ধাওয়া করে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার ৬ নম্বর ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া গ্রামের মো. হাসান জামাল ও সাবিহা খাতুন দম্পতির ছেলে। তুহিন পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মাঝে সবার ছোট। আসাদুজ্জামান তুহিনের স্ত্রীর নাম মুক্তা আক্তার। তাদের সংসারে দুই ছেলে রয়েছে। বড় ছেলের নাম তৌকির ও ছোট ছেলের নাম ফাহিম।

এর আগে গতকাল বৃস্পতিবার রাতে গাজীপুরে সন্ত্রাসী হামলায় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সকাল থেকেই আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা তার গ্রামের বাড়ি ভাটিপাড়া আসতে শুরু করেন।

সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের ৭৫ বছর বয়সী মা সাবিহা খাতুন বলেন, আমার ছেলে তুহিন কালকে (বুধবার) বলেছিল, আমি তোমাকে আগামী মাসে চোখের ডাক্তার দেখাবো। ডাক্তার অপারেশন করানোর কথা বললে অপারেশন করাব। আম্মা কোনো চিন্তা করো না।

ছেলের এমন মৃত্যুর খবরে পাগল প্রায় বৃদ্ধ বাবা মো. হাসান জামাল। ক্ষণে ক্ষণেই মুর্ছা যাচ্ছেন। আহাজারি করতে করতে তিনি বলেন, কী অপরাধ করেছিল আমার ছেলে? কী অন‍্যায় করেছিল সে? কেন এমন হলো। তোমরা আমার ছেলেকে এনে দাও।

স্বজনরা জানান, আসাদুজ্জামান তুহিন ২০০৫ সালে ফুলবাড়িয়া আাল হেরা স্কুল থেকে এসএসসি, ২০০২ সালে সিলেট এম সাইফুর রহমান কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর গাজীপুর ভাওয়াল কলেজ থেকে অনার্স করে সেখানে ভাই জসিম উদ্দিনের ব্যবসার সাথে যুক্ত হন। পরে ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি নেন। পাশাপাশি ২০১২ সালে সংবাদপত্রে কাজ শুরু করে চাকরি ছেড়ে দেন। তবে ২০০৯ বা ১০ সালের দিকে হঠাৎ বড় ভাই জসিম ক‍্যানসার আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

বতর্মানে তুহিন ও তার অপর ভাই সেলিম গাজীপুরে বসবাস করছিলেন। এর মধ‍্যে সেলিম পরিবহন শ্রমিকের কাজ করেন। দ্বিতীয় ভাই জাহাঙ্গীর আলম কক্সবাজারের টেকনাফে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন এবং অন‍্য ভাই শাজাহান মিয়া বতর্মানে সিলেটে বসবাস করেন। তাদের দুই বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় বতর্মানে গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা ও মা বসবাস করেন। তারা বার্ধক‍্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত। ছেলেরাই তাদের দেখভাল করেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments