নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও সামাজিক উদ্যোক্তা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শান্ত অবসরজীবন কাটানোর পরিবর্তে তিনি এখন দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছেন।
মালয়েশিয়া সফরকালে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বারনামাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এই পদটি তাঁর ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য নয়; বরং জনগণের দাবির প্রতিফলন। ইউনূসের ভাষায়, “এটা আমার নয়, এটা সেসব মানুষের চাওয়া, যাঁরা পরিবর্তন চেয়েছিলেন। আমি কেবল তাঁদের ইচ্ছেমতো চলতে সহায়তা করছি।”
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পথচলা সহজ হবে না। অনেকেই এ পরিবর্তনকে বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত রাজনৈতিক শক্তিগুলো অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
প্রধান উপদেষ্টা নতুন ভোটারদের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। গত দেড় দশকে লক্ষাধিক তরুণ ভোটার হওয়ার বয়সে পৌঁছালেও আগে কোনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাননি। এবার তারা প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেতে যাচ্ছেন। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটে। এরপর ৮ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাঁকে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব অর্পণ করেন।
অধ্যাপক ইউনূসের পেশাজীবন শুরু হয়েছিল ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় চরম দরিদ্র মানুষদের সহায়তা করার মধ্য দিয়ে। মাত্র ২৭ ডলার ব্যক্তিগত ঋণ দিয়ে ৪২টি পরিবারকে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ করে দেন তিনি। এই উদ্যোগ থেকেই গড়ে ওঠে গ্রামীণ ব্যাংক, যা ১৯৮৩ সালে পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন ও নারীর ক্ষমতায়ন এ ব্যাংকের মূল লক্ষ্য।
গ্রামীণ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংকটি প্রায় ১ কোটি ৭ লাখ ২০ হাজার গ্রহীতাকে ৪০ হাজার ৩৬৮ কোটি ডলারের বেশি ঋণ দিয়েছে, যার ৯৭ শতাংশই নারী।