শুক্রবার, নভেম্বর ২১, ২০২৫
spot_img
Homeজাতীয়বিশেষ বিসিএসেও কাটবে না চিকিৎসক সংকট

বিশেষ বিসিএসেও কাটবে না চিকিৎসক সংকট

চিকিৎসক সংকটে ভেঙে পড়ার উপক্রম উপজেলা পর্যায়ের চিকিৎসাসেবা। খুঁড়িয়ে চলছে জেলা সদর ও বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলো। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৩ হাজার চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। ভয়াবহ এই সংকট কাটাতে নিয়মিত তিনটি বিসিএসের পাশাপাশি বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে প্রায় তিন হাজার চিকিৎসক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। তবে বিশেষ বিসিএসেও কাটবে না সংকট। ফলে অতিরিক্ত দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগের দাবি উঠেছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলমান ৪৮তম বিশেষ বিসিএসে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীদের বড় একটি অংশই ৪৫ ও ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। বিশেষ বিসিএসে চূড়ান্ত পর্বে সুপারিশপ্রাপ্ত হলেও পদোন্নতি ও সিনিয়রিটিসহ নানা সুযোগ-সুবিধার কারণে তারা ৪৫ ও ৪৬তম বিসিএসে যোগদান করবেন। এতে যে লক্ষ্যে বিশেষ বিসিএসের আয়োজন করা হয়েছে, তার অনেকটাই অপূর্ণ থেকে যাবে। এমতাবস্থায়, অতিরিক্ত দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন তারা।

স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সারা দেশের হাসপাতালে এই মুহূর্তে ১২ হাজার ৯৮০টি চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। বিপুলসংখ্যক চিকিৎসকের অভাবে তৃণমূল পর্যায়ে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। এ সমস্যা নিরসনে দ্রুততম সময়ে চিকিৎসক নিয়োগের লক্ষ্যে ৪৮তম বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে দুই হাজার ৭০০ চিকিৎসক (সহকারী সার্জন) নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

গত ১৬ আগস্ট ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনে গিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, দেশের স্বাস্থ্য খাতে ১০ হাজারের বেশি চিকিৎসকের প্রয়োজন হলেও এ মুহূর্তে সেই পরিমাণ চিকিৎসক সরকারের হাতে নেই। ইতোমধ্যে তিন হাজার ডাক্তার নিয়োগের চেষ্টা চলছে, আগামী অক্টোবরের দিকে তাদের বিভিন্ন স্থানে নিয়োগের পরিকল্পনা আছে সরকারের।

এদিকে বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সূত্রে জানা গেছে, ৪৫ ও ৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে। শিগগিরি মৌখিক পরীক্ষা শুরু হবে। এর মধ্যে ৪৫তম বিসিএসে এমবিবিএস চিকিৎসকের পদ ৮৯১টি। যেখানে সহকারী সার্জনের ৪৫০টি এবং পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার পদ ৪৪১টি। কিন্তু ৮৯১টি পদের বিপরীতে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৫০। এই প্রার্থীদের প্রায় ৩০০ জন ৪৮তম বিশেষ বিসিএসে ভাইভা দিয়েছেন। অন্যদিকে, ৪৬তম বিসিএসে এক হাজার ৭৩১টি পদের বিপরীতে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন এক হাজার ৬০০ জন। এর মধ্যে এক হাজার ২০০ জনই বিশেষ বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা দিচ্ছেন। এ দুই বিসিএসে উত্তীর্ণ প্রায় দেড় হাজার প্রার্থী বিশেষ বিসিএসেও মৌখিক পরীক্ষা দিচ্ছেন। অর্থাৎ একই প্রার্থীরাই চলমান একাধিক বিসিএসে বিভিন্ন ধাপে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

এদিকে, ৪৭তম বিসিএসের কার্যক্রমও চলমান। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নিয়মিত এই তিন বিসিএসের মাধ্যমে তিন হাজার ৪৯৩টি পদ চূড়ান্ত করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশেষ বিসিএসে মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছেন এমন একজন চিকিৎসক আমার দেশকে বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে পর্যাপ্ত জনবল নেই। এ অবস্থায় ৪৮তম বিশেষ বিসিএসে তিন হাজার চিকিৎসক নিয়োগের উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে এক বাস্তব সমস্যার দিকে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি—৪৪, ৪৫ ও ৪৬তম বিসিএসে উত্তীর্ণ বহু চিকিৎসক আবারও এই বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ফলে ‘রিপিট ক্যাডার’ সমস্যায় প্রকৃত নতুন প্রার্থীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, অথচ হাসপাতালগুলোতে শূন্য পদ রয়ে যাচ্ছে। দেশের স্বাস্থ্যসেবাকে টেকসই করতে হলে নিয়োগের পদ সংখ্যা বাড়ানো এবং রিপিট ক্যাডার সমস্যার সমাধান এখন সময়ের দাবি।

বিশেষ বিসিএসে অংশ নেওয়া আরেক চিকিৎসক বলেন, চিকিৎসক সংকটে দেশের মানুষ আজ বিপাকে। গ্রামীণ হাসপাতালে ওয়ার্ড আছে, কিন্তু ডাক্তার নেই। অথচ হাজারো যোগ্য ডাক্তার চাকরির অপেক্ষায় বসে আছেন। ৪৮তম বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে দ্রুত নিয়োগ ও পদ না বাড়ানো হলে চলমান প্রান্তিক পর্যায়ের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার আরো বিপর্যয় হবে। মানুষের মৌলিক অধিকার সুরক্ষায় এবং স্বাস্থ্যসেবায় গতি আনতে অবশ্যই পদ বাড়ানো প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, সাধারণত নিয়মিত বিসিএসে যত নিয়োগ দেওয়া হবে, তার চেয়ে তিনগুণ বেশি পাস করানো হয়। বিশেষ বিসিএসে নিয়োগের পরও কতগুলো পদ ফাঁকা থাকতে পারে ইতোমধ্যে সেই তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে আছে, সে অনুযায়ী পিএসসির সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের আলোচনা হয়েছে।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান আমার দেশকে বলেন, বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা তিন হাজার ডাক্তার পেয়ে যাচ্ছি। এর মধ্য থেকে যে পরিমাণ খালি হবে তা পূরণের বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যথা সময়ে দৃশ্যমান হবে।

চলমান বিশেষ বিসিএসে অতিরিক্ত চিকিৎসক নেওয়ার সুযোগ আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যতটুকু শূন্য হবে ওই সংখ্যক ডাক্তারের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আগামী এক মাসের মধ্যে দিয়ে দেওয়া হবে। যেহেতু জরুরি ভিত্তিতে আমাদের তিন হাজার ডাক্তার দরকার, তাই কোনোভাবেই আমরা নিয়ম ভাঙতে চাচ্ছি না। একসঙ্গে তিন-চারটা বিসিএস চলছে, সেখানে এক বিসিএস থেকেই অতিরিক্ত নিয়োগ দিলে সমস্যা কমবে না, আরো বাড়বে।

সায়েদুর রহমান আরো বলেন, গতবারের ইন্টার্নিদের অনেকেই বিশেষ বিসিএস দিয়েছেন। তাদের যোগদান করতে সমস্যা হচ্ছে। জরুরিভিত্তিতে যেহেতু এসব পদে আমরা লোকবল নেব, সেজন্য চাই প্রতি ব্যাচের নিয়োগ যেন সঠিক নিয়মের মধ্য দিয়ে হয়। এখানে যত সংখ্যাই যাক, নতুন করে দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগের চিন্তা রয়েছে সরকারের। তাই, একটি বিসিএসে পাঁচ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিতে চাচ্ছে না সরকার। ৪৪তম বিসিএসের নিয়োগ হওয়ার আগেই নতুন নিয়োগ শুরু করা হবে

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments