শুক্রবার, নভেম্বর ২১, ২০২৫
spot_img
Homeসর্বশেষডাকসু নির্বাচনের ঐতিহ্য ও প্রেক্ষাপট: স্বার্থ, সংস্কৃতি ও শিক্ষার্থীর অধিকার

ডাকসু নির্বাচনের ঐতিহ্য ও প্রেক্ষাপট: স্বার্থ, সংস্কৃতি ও শিক্ষার্থীর অধিকার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রতিষ্ঠিত হয় ১০৪ বছর আগে, ১৯২১ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের প্রথম ভোট অনুষ্ঠিত হয় ১৯২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে। সেই থেকে শতাব্দীর মধ্যে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়েছে মাত্র ৩৭ বার। স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে নির্বাচন সবচেয়ে কম—মাত্র সাতবার।

বিগত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক পর্যন্ত ডাকসু ও হল সংসদগুলো শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক, আবৃত্তি, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন এবং প্রকাশনা বের করার কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তবে ষাটের দশকের শুরুতে শিক্ষা আন্দোলন, আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন ও উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে ডাকসুর রাজনৈতিক ভূমিকাই বড় হয়ে দেখা দেয়।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ছাত্ররাজনীতিতে দলীয় প্রভাব বাড়তে থাকে। ১৯৯১ সালে গণতন্ত্রে ফেরার পর ডাকসু নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে এক দফা ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচন হয়, যা বিতর্কিত হয়ে ওঠে।

এবারের নির্বাচনের প্রধান ইস্যু

  • হল দখল ও নির্যাতন সংস্কৃতি: শিক্ষার্থীরা চায়, গণরুম-গেস্টরুমের সংস্কৃতি আর ফিরে না আসুক।
  • শিক্ষার্থী অধিকার: ক্যানটিনে সুলভ মূল্যে ভালো খাবার, শিক্ষার পরিবেশ ঠিক রাখা।
  • শান্তি ও শৃঙ্খলা: ডাকসু ও হল সংসদ নিয়মিত শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলুক এবং সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াবিষয়ক আয়োজন নিশ্চিত করুক।

ঢাবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আহমেদ সজীব বলেন, “সবাই যাতে প্রথম বর্ষে এসেই হলে সিট পান, গণরুম-গেস্টরুম যাতে আর ফিরে না আসে, ক্যানটিন-ক্যাফেটেরিয়াগুলোতে যেন সুলভ মূল্যে ভালো খাবার পাওয়া যায়, শিক্ষার পরিবেশ ঠিক থাকে—এসব ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্ব করবে এমন প্রার্থী আমরা চাই।”

ডাকসুর ইতিহাস সংক্ষেপে

  • ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও ডাকসু ছিল না।
  • ১৯২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে গঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়ন, পরে ১৯৫৩-৫৪ শিক্ষাবর্ষে নামকরণ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)
  • ১৯৭০ সালে শুরু হয় সরাসরি ভোট, শিক্ষার্থীদের ভোটে ভিপি ও জিএস নির্বাচিত হতো।
  • ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের কারণে নির্বাচন হয়নি।
  • স্বাধীনতার পর নির্বাচন অনিয়মিত হয়ে পড়ে, ১৯৯১ সালের পর প্রায় ২৮ বছর বন্ধ ছিল।

রাজনৈতিক প্রভাব ও ছাত্রসংগঠন

  • ষাটের দশকের শেষের দিকে রাজনৈতিক দলের প্রভাব বৃদ্ধি পায়।
  • বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসুর নেতা হতে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখার প্রবণতা দেখা দেয়।
  • ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন (ছাত্রদল ও ছাত্রলীগ) ক্যাম্পাস দখল করে রাখার জন্য ভোট দেয়নি।
  • বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত ৭৫টি খুনের ঘটনা ঘটেছে, নির্যাতন, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি হয়েছে।

এবারের নির্বাচনে লক্ষ্য

  • শিক্ষার্থীরা চান, গণরুম ও গেস্টরুম সংস্কৃতি মূলোৎপাটন হবে, ক্যানটিনে ফাউ খাওয়া ও রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির প্রভাব কমবে।
  • ডাকসু ও হল সংসদকে শিক্ষার্থী অধিকার ও জাতীয় স্বার্থের বিষয়গুলো অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য কার্যকরী করা হবে।

শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা

  • ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধি ক্যাম্পাসে শান্তি, শৃঙ্খলা ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করবে।
  • সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াবিষয়ক আয়োজন করবে এবং ছাত্রসংগঠন ও প্রশাসনের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করবে।

মূল বার্তা

ডাকসু নির্বাচন শুধুই রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়; এটি শিক্ষার্থীদের অধিকার, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক নেতৃত্ব গড়ে তোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। এবারের নির্বাচন ঢাবির ছাত্ররাজনীতিকে নতুন দিগন্তে পৌঁছে দিতে পারে, যদি নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ছাত্রকল্যাণ ও শিক্ষার পরিবেশকে অগ্রাধিকার দেয়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments