১১ নভেম্বর ২০২৫
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার সময়সীমা শেষ হলেও কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। দলগুলোর মধ্যে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ বা কার্যকর আলোচনার উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়নি। জামায়াতে ইসলামী দাবি করেছে, তারা বিএনপিসহ কয়েকটি দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, তবে বিএনপি এতে সাড়া দেয়নি। বিএনপি জানিয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দল নয়, সরকার ডাকলে তারা আলোচনায় অংশ নেবে।
এ প্রেক্ষাপটে আজ মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা বৈঠকে বসছেন। বৈঠকে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও গণভোট আয়োজনের বিষয়ে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ধারণা করা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণা হতে পারে।
জুলাই সনদের মূল ধারা—গণভোট, উচ্চকক্ষে প্রপোশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতি এবং নতুন সংসদের ২৭০ দিনের মধ্যে বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা—নিয়ে দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। বিএনপি ও তার মিত্ররা দাবি করছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হতে হবে এবং উচ্চকক্ষ গঠনে সংরক্ষিত নারী আসনের আদল অনুসরণ করা উচিত। অন্যদিকে জামায়াতসহ আটদলীয় জোট চায়, সংসদ নির্বাচনের আগে নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট অনুষ্ঠিত হোক এবং উচ্চকক্ষে ভোটের আনুপাতিক হারে আসন বণ্টন করা হোক।
দুই পক্ষের অবস্থান পরস্পরবিরোধী হওয়ায় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি কমিশনের সুপারিশকে ‘প্রতারণা’ বলছে, আর জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও গণভোটের দাবিতে রাজপথে রয়েছে। আজ ঢাকায় তাদের ঘোষিত জনসভা থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা হওয়ার কথা।
সরকারও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গত ৩ নভেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বউদ্যোগে এক সপ্তাহের মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছানোর সময় দেওয়া হয়। সময়সীমা শেষ হওয়ায় এখন সরকার নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত হচ্ছে।
জানা গেছে, আজকের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফওজুল কবীর এবং পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উপস্থিত থাকবেন। বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।
সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট নিয়ে বিলম্ব করতে চায় না সরকার। সব দিক বিবেচনা করে আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনার সময়সীমা শেষ হয়েছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হয়নি। জুলাই সনদ ও গণভোট বিষয়ে সরকার দ্রুতই সিদ্ধান্ত জানাবে। তিনি বলেন, “সরকার বসে সামষ্টিকভাবে এই সিদ্ধান্ত নেবে। খুব শিগগিরই বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হবে।”



