ডিজিটাল যুগে আমাদের ডেটা মানেই স্মৃতি। কাজ, প্রজেক্ট সবকিছু। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ডেটা রাখব কোথায়? ক্লাউডে নাকি নিজের লোকাল ডিভাইসে? দুটিরই আছে সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা। আর কোনটা বেছে নেবেন, তা নির্ভর করবে আপনার প্রয়োজন ও পরিস্থিতির ওপর। ক্লাউড স্টোরেজ বলতে বোঝায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডেটা অনলাইনে সংরক্ষণ করা। যেমন : Google Drive, Dropbox, Microsoft OneDrive, Apple iCloud ইত্যাদি।
এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো যেকোনো সময় যেকোনো ডিভাইস থেকে অ্যাক্সেস পাওয়া যায়। কম্পিউটার নষ্ট হলেও ডেটা নিরাপদে থাকে ক্লাউড সার্ভারে। অনেক সেবা ফ্রি দেয় কিছু স্টোরেজ। আবার প্রয়োজন হলে সাবস্ক্রিপশন বাড়ানো যায়। সহযোগিতামূলক কাজের জন্যও এটি দারুণ। কারণ একই ফাইল একাধিক ব্যক্তি একসঙ্গে এডিট করতে পারে।
ল্যাপটপ বাড়িতে, কিন্তু আপনাকে অফিসে বসে ফাইল দরকার? শুধু ইন্টারনেট থাকলেই হয়ে যাবে। সহযোগিতামূলক কাজেও ক্লাউড অপরিহার্য। একই ডকুমেন্ট একাধিক ব্যক্তি একসঙ্গে এডিট করতে পারে। ভার্সন হিস্টরি দেখা যায়। এমনকি আগের সংস্করণে ফেরত যাওয়া যায়।
তবে অসুবিধাও আছে। প্রথমত, ইন্টারনেট ছাড়া এটি অকেজো। দ্বিতীয়ত, নিরাপত্তা ও প্রাইভেসি নিয়ে অনেকের সংশয় রয়ে গেছে। বড় বড় কোম্পানি যেমন : Dropbox বা iCloud-ও হ্যাকারদের টার্গেট থেকে বাদ যায় না। তাই দুই ধাপ যাচাইকরণ (Two-Factor Authentication) ও শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা জরুরি। এছাড়া ফ্রি স্টোরেজ সাধারণত সীমিত Google Drive-এ ১৫ জিবি। iCloud-এ ৫ জিবি। তার বেশি দরকার হলে মাসিক বা বার্ষিক ফি দিতে হয়।
অন্যদিকে লোকাল স্টোরেজ মানেই আপনার কম্পিউটার, এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভ, SSD, পেনড্রাইভ বা NAS (Network Attached Storage)-এ ডেটা রাখা। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো গতি ও নিরাপত্তা। ফাইল খোলার জন্য ইন্টারনেটের দরকার নেই। বড় ভিডিও বা গ্রাফিকস ফাইলও কয়েক সেকেন্ডে ট্রান্সফার হয়। সংবেদনশীল তথ্য সম্পূর্ণ আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকে, বাইরের কেউ অনুমতি ছাড়া এক্সেস করতে পারে না।
কিন্তু এরও ঝুঁকি আছে। হার্ডড্রাইভ নষ্ট হয়ে যাওয়া, ডিভাইস চুরি হওয়া বা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। একবার লোকাল স্টোরেজ নষ্ট হলে, ব্যাকআপ না থাকলে ডেটা চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে। তাই নিয়মিত ব্যাকআপ রাখা খুব জরুরি, যা অনেকেই অবহেলা করেন।
প্রয়োজনভেদে সমাধান ভিন্ন। যদি আপনি ভ্রমণ করেন, দূরবর্তী টিমে কাজ করেন বা ফাইল শেয়ার করতে হয়, ক্লাউড স্টোরেজ ভালো। আর যদি সংবেদনশীল তথ্য থাকে বা বড় ডেটা নিয়ে অফলাইনে কাজ করতে হয়, তাহলে লোকাল স্টোরেজ উপযোগী।
বর্তমান ক্লাউড সেবার মূল্য (২০২৫ অনুযায়ী)
Google One : ১০০ জিবি মাসিক প্রায় $১.৯৯ ডলার।
Dropbox : ২ টেরাবাইট মাসিক প্রায় $৯.৯৯ ডলার।
Microsoft 365 (OneDrive ১ টেরাবাইটসহ) মাসিক প্রায় $৬.৯৯ ডলার।
iCloud+ : ২০০ জিবি মাসিক প্রায় $২.৯৯ ডলার।
এক কথায়, ‘ডেটা নিরাপত্তা কোনো একক সমাধানে সীমাবদ্ধ নয়। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যৎ হলো হাইব্রিড স্টোরেজ মডেল গতি ও নিয়ন্ত্রণের জন্য লোকাল আর অ্যাক্সেস ও সহযোগিতার জন্য ক্লাউড। কারণ ডেটা হারালে শুধু তথ্যই যায় না। চলে যায় সময়, অর্থ আর স্মৃতির অমূল্য ভাণ্ডার।