ভারতের কোটি কোটি মানুষ এই সপ্তাহ থেকে এক বছরের জন্য বিনা মূল্যে ব্যবহার করতে পারছেন চ্যাটজিপিটির নতুন স্বল্পমূল্যের সংস্করণ ‘গো’। গুগল ও পারপ্লেক্সিটি এআইয়ের মতো কোম্পানিগুলোও একই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। তারা স্থানীয় মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে অংশীদারত্বে ভারতীয় ব্যবহারকারীদের এক বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) টুল বিনা খরচে ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে।
পারপ্লেক্সিটি এআই যুক্ত হয়েছে ভারতের দ্বিতীয় বৃহৎ মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রদানকারী এয়ারটেলের সঙ্গে। আর গুগল হাত মিলিয়েছে দেশটির সবচেয়ে বড় টেলিকম কোম্পানি রিলায়েন্স জিওর সঙ্গে। এসব অংশীদারত্বের ফলে এখন ভারতীয় মোবাইল গ্রাহকেরা মাসিক ডেটা প্যাকের সঙ্গে ছাড়ে বা সম্পূর্ণ বিনা খরচে এআই চ্যাটবট ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন।
দীর্ঘমেয়াদি কৌশল
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এসব অফারকে নিছক উদারতা মনে করা ভুল হবে। এটি আসলে ভারতের ডিজিটাল ভবিষ্যতের ওপর দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত বিনিয়োগ।
কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের বিশ্লেষক তরুণ পাঠক বিবিসিকে বলেন, “পরিকল্পনাটা খুব পরিষ্কার—ভারতীয়দের আগে জেনারেটিভ এআই ব্যবহারে অভ্যস্ত করে তোলা হবে, তারপর সেটির জন্য মূল্য নির্ধারণ করা হবে।”
তরুণ পাঠকের মতে, ভারতের বিশেষত্ব হলো বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারী ও তরুণ জনগোষ্ঠী। “চীনের মতো বাজারে ব্যবহারকারী বেশি হলেও সেখানে কড়াকড়ি নিয়মের কারণে বিদেশি কোম্পানির প্রবেশ সীমিত। কিন্তু ভারতে বাজার উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক, যা বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয়।”
তথ্যই সম্পদ
ভারতে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯০ কোটির বেশি এবং দেশটিতে ডেটার দাম বিশ্বে সবচেয়ে কম। ভারতের অনলাইন জনসংখ্যার বড় অংশই ২৪ বছরের নিচের তরুণ। তারা কাজ, যোগাযোগ, বিনোদন—সবকিছুই করে অনলাইনে।
তাই ডেটা প্যাকের সঙ্গে এসব এআই টুল যুক্ত করে দেওয়া প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য বিরাট সুযোগ তৈরি করেছে। কারণ, যত বেশি মানুষ এসব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করবে, কোম্পানিগুলো তত বেশি তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে—যা তাদের এআই মডেল উন্নত করার জন্য অমূল্য সম্পদ।
তরুণ পাঠক বলেন, “ভারত অবিশ্বাস্যভাবে বৈচিত্র্যময় একটি দেশ। এখানকার ব্যবহারিক অভিজ্ঞতাগুলো ভবিষ্যতে সারা বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হবে। যত বেশি মৌলিক তথ্য পাওয়া যাবে, ততই এআই মডেল নিখুঁত ও কার্যকর হবে।”
গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ
তবে এই প্রযুক্তি প্রতিযোগিতা নিয়ে উদ্বেগও বাড়ছে। বিশেষ করে ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা নিয়ে।
দিল্লির প্রযুক্তি লেখক ও বিশ্লেষক প্রশান্ত কে রায় বলেন, “বেশির ভাগ ব্যবহারকারী এখনো বিনা মূল্যের কিছু পেতে নিজের তথ্য দিতে রাজি। এই প্রবণতা ভবিষ্যতেও চলবে। কিন্তু এখানেই সরকারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ এত সহজে নিজের তথ্য দিয়ে দিচ্ছে—এ বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে আরও কঠোর তথ্য সুরক্ষা আইন প্রয়োজন।”
ওপেনএআই, পারপ্লেক্সিটি এআই ও গুগল—এই তিন কোম্পানি এ বিষয়ে বিবিসির প্রশ্নের জবাব দেয়নি।



