শুক্রবার, নভেম্বর ২১, ২০২৫
spot_img
Homeতথ্যপ্রযুক্তিসোশ্যাল মিডিয়ায় ওভারশেয়ারিং বিপজ্জনক

সোশ্যাল মিডিয়ায় ওভারশেয়ারিং বিপজ্জনক

সকালে ঘুম থেকে ওঠে অনেকেই প্রথম কাজ হিসেবে হাতে নেন স্মার্টফোন। ফেসবুকে নিজের ঘুম ভাঙার ছবি। ইনস্টাগ্রামে ব্রেকফাস্টের প্লেটের ছবি। টুইটারে অফিস যাওয়ার পথের সেলফি। সবই ভেসে ওঠে সবার নিউজফিডে। অনেকে আবার সন্তানের নাম, জন্মদিন, স্কুলের নাম এমনকি ভ্রমণের সময় যাবতীয় তথ্য খোলাখুলিভাবে শেয়ার করেন। এসবকে আমরা ভাবি দৈনন্দিন আপডেট।

সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন এটাই হতে পারে বড় ধরনের ঝুঁকির ফাঁদ। আজকের ডিজিটাল জীবনে সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের আনন্দ, যোগাযোগ আর নিজেকে প্রকাশ করার অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু অনেকে বুঝতেও পারেন না যে এখানে প্রতিদিন কীভাবে নিজের গোপন তথ্য অজান্তেই উন্মুক্ত করে দিচ্ছেন। কেউ আবার লিখে ফেলেন, ‘আজ ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাচ্ছি, এক সপ্তাহ থাকব।’

এমনকি ঘরোয়া পারিবারিক ঝগড়ার কথাও প্রকাশ করেন। এসব তথ্য বন্ধুদের সঙ্গে ভাগাভাগি করার মতো মনে হলেও বাস্তবে এগুলো প্রতারক বা অপরাধীদের কাছে হয়ে ওঠে সোনার খনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওভারশেয়ারিংয়ের সবচেয়ে বড় বিপদ হলো আইডেন্টিটি থেফট। যার মানে হলোÑছবি ও তথ্য চুরি করে ভুয়া আইডি খোলা হয় এবং তা দিয়ে অর্থনৈতিক প্রতারণা চালানো হয়।

ওভারশেয়ারিং বিপদ

ব্যক্তিগত তথ্য মানেই শুধু ফোন নম্বর বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নয়। আপনার জন্মদিন, ঠিকানা, কোথায় যাচ্ছেন বা কতদিন বাইরে থাকবেন এসব তথ্যও প্রতারক বা অপরাধীদের জন্য অমূল্য সম্পদ। উদাহরণস্বরূপ, অনেক অনলাইন ব্যাংকিং সাইট বা ইমেইল রিকভারি করতে জন্মতারিখ প্রয়োজন হয়। হ্যাকাররা আপনার পোস্ট থেকে জন্মতারিখ জেনে নিলে সহজেই পাসওয়ার্ড রিসেট করে অ্যাকাউন্ট দখল করতে পারে।

আপনার জন্মতারিখ, মোবাইল নম্বর কিংবা ঠিকানা দিয়ে যে কেউ সহজেই ফেক আইডি খুলতে পারে। এমনকি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রবেশের জন্য এগুলো ব্যবহার করতে পারে। বাংলাদেশে বেশ কয়েকবার দেখা গেছে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে টাকা ধার করা হয়েছে। আবার কোনো ছবি বিকৃত করে ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছে। তা ছাড়া আপনি ভ্রমণে গেছেন বলে ফেসবুকে জানালে চোররা নিশ্চিত হয়, আপনার বাসা ফাঁকা।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে এমন উদাহরণ বহুবার দেখা গেছে। আর বাংলাদেশেও সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এমন চুরির খবর পাওয়া গেছে। প্রতারকরা এসব তথ্য ব্যবহার করে নানা ধরনের সাইবার অপরাধ চালায়। যেমন : ফিশিং লিংক পাঠিয়ে ব্যাংক তথ্য হাতিয়ে নেওয়া।

ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করা। এমনকি অনলাইন প্রেমের ফাঁদ পাতাও সহজ হয়ে যায়। অনেকেই জানেন না, একটি সাধারণ ‘Happy Birthday to me’ পোস্ট থেকেও প্রতারকরা আপনার জন্মদিনের তথ্য সংগ্রহ করতে পারে, যা ব্যাংক বা ইমেইল অ্যাকাউন্ট রিকভারি করার সময় কাজে লাগতে পারে। এভাবে সাধারণ তথ্যও হয়ে ওঠে বড় বিপদের কারণ।

তাহলে সমাধান কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথমেই নিজের প্রাইভেসি সেটিংস মজবুত করতে হবে। যেন অচেনা মানুষ আপনার পোস্ট দেখতে না পারে। দ্বিতীয়ত, সংবেদনশীল তথ্য যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, সন্তানের স্কুলের নাম কিংবা ভ্রমণের তারিখ কখনোই শেয়ার করবেন না। ছবি বা ভিডিও পোস্ট করতে চাইলে চেষ্টা করুন ভ্রমণ শেষে তা প্রকাশ করতে। অপরিচিত কারো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করার আগে ভেবে দেখুন।

কারণ অনেক সময় ফেক প্রোফাইল শুধু তথ্য সংগ্রহের জন্য তৈরি করা হয়। সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার জায়গা বটে। তবে এটি একই সঙ্গে প্রতারকদের জন্য তথ্যের ভান্ডারও।

তাই সচেতন না হলে আপনারই প্রিয় প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠতে পারে বিপদের কারণ। মনে রাখবেন, তথ্যই আজকের দিনে সবচেয়ে বড় শক্তি। আর এই শক্তি যদি ভুল মানুষের হাতে পড়ে, তবে ক্ষতির পরিমাণ অনুমান করাও কঠিন হয়ে যায়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments