সংকট নিরসনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দাবি ডা. তাহেরের
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর চার সদস্যের প্রতিনিধি দল ৩১ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৪টায় যমুনায় তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহেরের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান এবং সাবেক এমপি ডা. হামিদুর রহমান আযাদ।
বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে ডা. তাহের জানান, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন, নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, জনগণ স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের পতনের পর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পরিবর্তনের প্রত্যাশা করেছিল। নির্বাচনের মাধ্যমে সেই পরিবর্তনের সূচনা ঘটিয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়াই সবার লক্ষ্য।
ডা. তাহের জানান, প্রধান উপদেষ্টা তিনটি বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন— বারবার নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সে জন্য সংস্কার, দৃশ্যমান বিচার নিশ্চিত করা এবং বিশ্বমানের আনন্দমুখর নির্বাচন আয়োজন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব প্রতিশ্রুতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করা ৩১ দলের মধ্যে অধিকাংশই গুরুত্বপূর্ণ ১৯টি ইস্যুতে একমত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতি চালু। ২৫টি দল এ পদ্ধতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। লোয়ার ও আপার হাউসে পিআর প্রবর্তন করা হলে ভোট ডাকাতি রোধ হবে এবং আধুনিক ও স্বচ্ছ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, অধিকাংশ দলের মত উপেক্ষা করে যদি কয়েকটি দলের চাপে পুরনো পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়, তবে তা সংকট তৈরি করবে এবং পুরো প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলবে।
ডা. তাহের স্পষ্টভাবে বলেন, জামায়াত ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন চায়। তবে সে নির্বাচন হতে হবে সব দলের সম্মতি ও অংশগ্রহণে। তবেই অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচন সম্ভব হবে।
নুরুল হক নুরের ওপর হামলার ঘটনাকে তিনি উদ্বেগজনক আখ্যা দিয়ে বলেন, “দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম নায়ক ও নতুন বাংলাদেশের আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর এ হামলা গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার জন্য বড় হুমকি।” তিনি অবিলম্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন পূর্ব সময়ে এমন ঘটনা ঘটলে নির্বাচনের সময় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। তাই এখনই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সংকট নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সরকারেরও দায়িত্ব রয়েছে।
ডা. তাহের অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকার এখনো দখলদার ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। যে সরকার একটি বাসস্ট্যান্ড দখলদার উচ্ছেদে ব্যর্থ হয়, সে সরকার কীভাবে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করবে, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, আন্তরিক উদ্যোগ নিলে সরকার এখনো সংকট থেকে উত্তরণের পথ তৈরি করতে পারবে।
প্রধান উপদেষ্টা আলোচনায় উত্থাপিত বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানান জামায়াতের নায়েবে আমীর।



