দেশীয় বালাইনাশক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশি কাঁচামালের ওপর অতিরিক্ত শুল্কের কারণে অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছে। সরাসরি আমদানিতে শুল্ক ৫–১০ শতাংশ হলেও উৎপাদন পর্যায়ে কাঁচামালে ৪০–৫৮ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় খাত সংশ্লিষ্টরা শুল্ক হ্রাস বা মওকুফের দাবি তুলেছেন।
গত ২৫ আগস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) বালাইনাশক পণ্যের আমদানিকারক ও দেশীয় উৎপাদনকারীদের নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সহযোগী উপাদানের শুল্ক হ্রাস বা শুল্কমওকুফ যৌক্তিক বলে মত প্রকাশ করা হয়। এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আল-আমিন শেখ জানান, বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি বৈঠকে বলেন, শুল্ক হ্রাস করলে কৃষকরা উপকৃত হবেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি মো. হাসিনুর রহমানও একই মত দেন। তিনি বলেন, স্থানীয় শিল্পকে উৎসাহিত করতে কাঁচামালে শূন্য শুল্ক প্রয়োগ হলে কৃষকরা আরও সুবিধা পাবেন।
বাংলাদেশ এগ্রোকেমিকেল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সহযোগী উপাদানের শুল্ক বেশি হওয়ায় দেশীয় উৎপাদনকারীরা উৎসাহ পাচ্ছেন না। তিনি শুল্ক মওকুফের দাবি জানান। তিনি বলেন, দেশে কৃষক পর্যায়ে বছরে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার এক লাখ টন বালাইনাশক বাজার রয়েছে, যার ৯৫ শতাংশই আমদানির ওপর নির্ভরশীল।
আমদানিকারকরা ফিনিশড পণ্য আমদানি করলে সাত-আট হাজার কোটি টাকায় বাজার পূরণ সম্ভব, কিন্তু স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করলে একই পরিমাণ পণ্যের খরচ হবে মাত্র তিন-চার হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ক্রপ প্রোটেকশন অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি এম. সায়েদুজ্জামান বলেন, বালাইনাশক কৃষি উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য, তাই উৎপাদনকারী ও আমদানিকারক নির্বিশেষে শুল্ক মওকুফ করা উচিত। বাংলাদেশ সুদান জিনিং ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিনিধি মাহমুদ কামাল গাজীও একই দাবি করেন।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্থানীয় উৎপাদনকারী ও আমদানিকারকদের জন্য সহযোগী উপাদানের শুল্ক হ্রাসের বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচরে আনা হবে এবং উৎসে কর হ্রাসে আয়কর বিভাগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। তবে কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি।
চলতি বাজেটে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ শুল্ক ও কর প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ২০২১ সালের নভেম্বরও কৃষি মন্ত্রণালয় শুল্ক শূন্যের অনুরোধ করেছিল, কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি।
বর্তমানে দেশে ২২টি দেশীয় কোম্পানি কীটনাশক উৎপাদনে আগ্রহী হলেও তারা নিয়মগতভাবে কোণঠাসা। অন্যদিকে সাতটি বহুজাতিক কোম্পানি প্রায় ৪০ শতাংশ বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। দেশীয় কোম্পানিগুলো সোর্স পরিবর্তনের সুযোগ না পাওয়ায় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না।
এক হাজার ৩৮০ জন আমদানিকারক থাকা সত্ত্বেও সর্বশেষ অর্থবছরে মাত্র ২১১ জনই পণ্য আমদানি করেছেন। অন্যরা বিভিন্নভাবে বাজারজাত করছে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। মূলত সিন্ডিকেট চক্র বহুজাতিক ও কয়েকটি দেশীয় কোম্পানির পণ্য মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি করছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, পেস্টিসাইড টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি কমিটি (পিটাক) দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে কড়া শর্ত আরোপ করে সমস্যা বাড়াচ্ছে, অথচ বহুজাতিক কোম্পানির জন্য সুবিধা তৈরি হচ্ছে।



