নতুন বাইজেন্টাইন: অস্থির বিশ্বের প্রেক্ষাপটে গ্রিস ও মধ্যপ্রাচ্যের সম্পর্ক—লেখক শন ম্যাথিউসের লেখা ‘দ্য নিউ বাইজেন্টাইনস’ বইটিতে বর্তমান গ্রিস এবং লেভান্তে ছড়িয়ে থাকা ম্লান সম্প্রদায়গুলোর একটি প্রাণবন্ত ইতিহাস এবং ভ্রমণ কাহিনীর ঘটনা উঠে এসেছে, যার মধ্যে গ্রিসের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের সম্পর্কের অনুসন্ধান করা হয়েছে। লেখক ডেভিড টং সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-তে বইটির সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। এক দৃষ্টিকোণ থেকে ‘দ্য নিউ বাইজেন্টাইনস’ হলো চতুর্থ প্রজন্মের গ্রিক–আমেরিকানদের পরিচয়ের অনুসন্ধান, প্রাচীন গ্রিস থেকে শুরু করে পশ্চিম ও পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য এবং প্রায় চার শতাব্দীর অটোমান শাসন অতিক্রম করে আধুনিক গ্রিক রাষ্ট্রের আত্মিক বিকাশের বিভিন্ন স্তর তুলে ধরে। বাইজেন্টাইন, হেলেন, রোমিওই, রুম/রোমাইওস/রোমাইকো—ম্যাথিউস স্নেহভরে এগুলো অনুসন্ধান করেছেন, যেমন তিনি আগ্রহ দেখিয়েছেন উত্তর গ্রিসের অন্যান্য বাসিন্দা পোমাক কিংবা তুর্কি মুসলিমদের প্রতি। তার দৃষ্টিশক্তি অসাধারণ এবং বাক্য গঠনও প্রাণবন্ত, এথেন্সকে ‘কংক্রিটে মোড়া শহর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং ইস্তাম্বুলের চায়ের কাপের মধ্যে দিয়ে কাচের সব আশ্চর্য সামগ্রী তুলে ধরেছেন, অন্যদিকে কায়রোকে ধীরে ধীরে ক্ষীয়মান লোভনীয় সৌন্দর্য দিয়ে তুলনা করেছেন। ম্যাথিউসের বইটি পড়তে অসাধারণ, যেখানে তিনি তার পরিদর্শন করা সীমান্ত চৌকিগুলোকে তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বর্ণনা করেছেন, এপিরাস থেকে তুর্কি সীমান্ত পর্যন্ত পথটি অনেকটাই দীর্ঘ এবং সেই করিডোরটি ইওয়ানিনা থেকে এথেন্সের দূরত্বের প্রায় দ্বিগুণ। এখানে প্রবেশ করলেই সেসব মানুষ এবং ইতিহাসের মুখোমুখি হওয়া যায়, যার জটিলতা বলকানকে ইউরোপের বারুদ কারখানায় পরিণত করেছিল। এটি দুর্বল হৃদয়ের জন্য নয়, এবং আমাদের সময়কার ইতিহাসবিদ হাইঞ্জ এ রিখটার বা মার্ক মাজোওয়ারের মতো ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব ছাড়া উল্লেখযোগ্য কেউ এই ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করেননি। ম্যাথিউস অনেক গভীর থেকে অনুসন্ধান করেন, আর এই কারণে তার ভ্রমণ অনুসন্ধান অতীতের ভ্রমণকারীদের তুলনায় অনেক বেশি তথ্যবহুল এবং টেকসই গাইড হিসেবে প্রমাণিত হয়। ইসরাইলের গ্রীকদের ওপর তার এই লেখাটি সেই ভূমি বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন, আমরা জানতে পারি গ্রিক অর্থোডক্স চার্চ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমির মালিক এবং নেসেটের জমিদার, যা আর্থিক লেনদেনের একটি কলঙ্কজনক ইতিহাস তুলে ধরে; এক সময় গ্রিক জনসংখ্যা ৮,০০০–২০,০০০ ছিল, এখন তা কমে প্রায় এক হাজারে নেমেছে। কায়রো ও ইস্তাম্বুলে ম্যাথিউস যেসব গ্রিক সম্প্রদায় দেখেছেন, তারাও নাটকীয়ভাবে কমে গেছে, তারা এখন ছায়া সম্প্রদায় হিসেবে আছে, ডুবে যাওয়া অবস্থায় যেন মাথাটা কেবল দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে ইস্তাম্বুলের গ্রিক অর্থোডক্সের অবস্থা মর্মান্তিক, তাদের সংখ্যা কমে ২,০০০-এ চলে এসেছে এবং তাদের কাঁধে অসহনীয় কূটনৈতিক বোঝা থাকার পরেও তারা প্রায় ২,৭০০ বছর ধরে চলা আসা সম্প্রদায়িক ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। এখানে তার প্রতিবেদন, বিশ্লেষণাত্মক দক্ষতা এবং ইতিহাসের বোধ পূর্ণভাবে প্রকাশ পেয়েছে। এটি কবি কনস্টানটাইন ক্যাভাফির আলেকজান্দ্রিয়া সম্পর্কে তার মতামত জানার আগ্রহ তৈরি করেছে; আলেকজান্দ্রিয়া একসময় অর্থদাতা, ব্যবসায়ী এবং বণিকদের সমৃদ্ধ পৃথিবী ছিল। এছাড়াও ডেভিডের অনেক বন্ধুর পৈতৃক নিবাস থাকার কারণে এ সম্পর্কে তার আগ্রহ ছিল। ম্যাথিউস স্পষ্টভাবে কায়রোতে জন্মগ্রহণকারী আলেকজান্দ্রিয়ান স্ট্র্যাটিস সিরকাসের লেখা ‘ড্রিফটিং সিটিস’ ট্রিলজির উদ্ধৃতি দিয়েছেন, তবে ডেভিড ম্যাথিউসের উদ্ধৃতিকে অন্য যেকোনো গ্রিক প্রেমীর থেকে বেশি মূল্যায়ন করেছেন। ডেভিড জানতেন, এদের অনেকেই গ্রিসের বাইরের লোক ছিলেন, ব্রিটিশ ভ্রমণ লেখক প্যাট্রিক লেই ফার্মারের সাথে তার একবার দেখা হয়েছিল, যেখানে তিনি তাকে ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত গ্রিস শাসনকারী ডানপন্থী সামরিক একনায়কতন্ত্র কর্নেলদের বিরুদ্ধে কলম ধরতে বলেছিলেন, কিন্তু প্যাট্রিক তাকে হতাশ করেছে। সাইপ্রাস, স্মির্না/ইজমির, বৈরুত এবং দামেস্কেও গ্রিক সম্প্রদায় ছিল, তবে এগুলো তুলে আনলে মূল বিষয়বস্তুর গুরুত্ব দুর্বল হতো। এরা গ্রিসের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন ও ইসরাইলের কৌশলগত অংশীদার ছিল। তুরস্কের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রতি অভিন্ন উদ্বেগ দুই দেশকে একত্রিত করেছে। তারা প্রতিরক্ষা, জ্বালানি এবং গোয়েন্দা ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে, অন্যদিকে ইসরাইলেরা এথেন্সের বাজারে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। গ্রিকের বিরোধী দল গাজায় গণহত্যার জন্য ইসরাইলের উপর বাণিজ্য বা নিষেধাজ্ঞার আরোপ না করার কারণে ক্ষমতাসীন মধ্য-ডানপন্থী সরকারের সমালোচনা করে, তারা নিউ ডেমোক্রেসির আওতায় এই অবস্থানকে ‘লজ্জাজনক ব্যতিক্রম’ বলেছে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিস তাতেও দমে যাননি। ১৯৭০-এর দশকে কর্নেল-পরবর্তী সময়ে সমাজতান্ত্রিক প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেয়াস পাপান্দ্রেউ ‘মৃত্যুর ঘাঁটি থেকে বেরিয়ে আসুন’ প্রচারণা চালিয়েছিলেন, যা গ্রিসের পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে মার্কিন সামরিক ঘাঁটির নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে একটি সমাবেশ ছিল। প্রধানমন্ত্রী কনস্টান্টিনোস মিতসোটাকিস ১৯৯০ সালে ক্রিট দ্বীপে সৌদা বে নৌ ঘাঁটির মর্যাদা উন্নীত করেন, ২০১৯ ও ২০২১ সালে তার ছেলে মূল ভূখণ্ডের চারটি স্থান ছেড়ে দেয় এবং আলেকজান্দ্রোপলিসকে মার্কিন সেনাদের প্রধান লজিস্টিক নোডে পরিণত করে, যা রাশিয়ার সাথে যুদ্ধের সময় ইউক্রেনে রসদ সরবরাহে ব্যবহৃত হয়। ম্যাথিউস তার দেশের প্রতি শ্রদ্ধায় উদ্বেলিত, যেখানে তার প্রপিতামহ মিহাইলিস এবং পানায়োটিসকে থাকার জায়গা দিয়েছিল এবং পারিবারিক সমৃদ্ধি আনতে সাহায্য করেছিল। যুদ্ধ-পরবর্তী গ্রিসে আমেরিকান মার্শাল প্ল্যানের সাহায্য উল্লেখ করে পানায়োটিস বলেন, ‘আমেরিকান ডলার গ্রিসের জন্য বিস্ময়কর কাজ করেছে। আঙ্কেল স্যাম দেশকে বাঁচিয়েছেন’। সেই প্রজন্মের কাছে ১৯৪০-এর দশকের গৃহযুদ্ধ একটি দ্বৈতসংগ্রাম ছিল। আজকের গ্রিসে সেই সামাজিক বিভেদ অনেকাংশে সেরে গেছে। এর প্রতীক ছিল গ্রিগোরিস ল্যামব্রাকিসের নামে যুব আন্দোলনের সংগ্রাম; তার হত্যাকাণ্ড ঘটে ১৯৬৩ সালের মে মাসে এবং কোস্তা-গাভরাসের চলচ্চিত্র জেডে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। গ্রিসের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর থেসালোনিকির একটি রাস্তার মোড়ে তার স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি হয়েছে। অনেকের কাছে এটি পবিত্র স্থান, কেউ কেউ তাকে এবং গৃহযুদ্ধে পরাজিত ব্যক্তিদের ক্লেফটদের ঐতিহ্য থেকে এসেছেন বলে মনে করেন। ডেভিড বলেছেন, এ ঐতিহ্যই গ্রিসকে প্রাণবন্ত দেশ হিসেবে গড়তে সাহায্য করেছে, যা ম্যাথিউস সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। শন ম্যাথিউসের লেখা ‘দ্য নিউ বাইজেন্টাইনস: দ্য রাইজ অফ গ্রিস অ্যান্ড রিটার্ন অফ দ্য নিয়ার ইস্ট’ বইটি ১১ ডিসেম্বর হার্স্ট কর্তৃক প্রকাশিত হয়।
নতুন বাইজেন্টাইন: অস্থির বিশ্বের প্রেক্ষাপটে গ্রিস ও মধ্যপ্রাচ্যের সম্পর্ক
RELATED ARTICLES



