আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নির্বাচন-পূর্ব সংস্কার সনদ বাস্তবায়নসহ একাধিক শর্ত তুলে ধরেছে এবং দাবি পূরণ না হলে রাজপথে নামার হুমকি দিয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের সময়সূচি চূড়ান্ত হলেও, জামায়াত ও এনসিপি অভিযোগ করছে সংস্কার ও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচারের বিষয় পাশ কাটিয়ে একটি “সাজানো” নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। এ অবস্থান বিএনপির জন্যও চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে, কারণ বিএনপি নির্বাচনের আগে বৃহত্তর সাংবিধানিক সংস্কারের পক্ষে নয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জামায়াত ও এনসিপি রাজনৈতিক মাঠে চাপ অনুভব করায় আসন ভাগাভাগি ও রাজনৈতিক দরকষাকষির কৌশল হিসেবেও এই শর্ত দিচ্ছে। এনসিপি এখনো এককভাবে নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পায়নি, আর জামায়াতের সংগঠিত শক্তি থাকলেও সাধারণ মানুষের বিস্তৃত সমর্থন নেই। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগবিহীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপির জনসমর্থন বেড়ে গেছে, যা জামায়াতকে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের দাবি তুলতে প্রণোদিত করছে।
দল দুটির মূল দাবি-জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রণীত জুলাই সনদকে আইনগত ভিত্তি দিয়ে তা নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়ন করা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা এবং সংসদ নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি চালু করা। বিএনপি এ পদ্ধতির বিরোধিতা করছে এবং মনে করছে, এসব দাবি নির্বাচনের গতিপথ ভিন্ন খাতে নিতে পারে।
জামায়াত ও এনসিপির ভেতরে নির্বাচন বর্জনের কথাও আলোচনায় রয়েছে। যদি তা হয়, তাহলে নির্বাচনের অন্তর্ভুক্তিমূলক চরিত্র প্রশ্নবিদ্ধ হবে যা বিএনপির জন্যও অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। যদিও বিএনপির শীর্ষ নেতারা বিষয়টিকে “মাঠের বক্তব্য” হিসেবে দেখছেন এবং বিশ্বাস করেন, সব দলই শেষ পর্যন্ত ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেবে।
অন্তর্বর্তী সরকার এখন নতুন করে সংলাপের পথে হাঁটছে না; বরং নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তফসিল ও নির্বাচন পরিচালনা নিয়ে আলোচনা করবে বলে জানিয়েছে। তবে সংবিধান সংশোধন বা সংস্কার সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে কমিশনের আলোচনার সুযোগ নেই।
বিশ্লেষকদের সতর্কতা-নির্বাচনের আগে যদি রাজনৈতিক দাবিদাওয়া নিয়ে বড় আকারের আন্দোলন শুরু হয়, তাহলে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হতে পারে। যদিও কোনো দলই শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের দায় এড়িয়ে যেতে চাইবে না, তবুও বর্তমান অবস্থার কারণে ভোটের অনিশ্চয়তা ও রাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়ে যাচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা