ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সংকটে রয়েছে। গত পাঁচ বছর ধরে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ এই প্রতিষ্ঠান এখন আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতেও হিমশিম খাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের পুলে ১৭টি গাড়ি থাকা সত্ত্বেও গত এপ্রিল মাসে আরও দুটি বিলাসবহুল গাড়ি কেনা হয়েছে, যার জন্য ব্যয় হয়েছে প্রায় এক কোটি ৪৭ লাখ টাকা। অথচ ২০১৯ সালের আর্থিক প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ
উত্তরা ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শেয়ারহোল্ডারদের অভিযোগ, তিনি ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ ও ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে নিয়মনীতি মানছেন না। অভিযোগ রয়েছে, ঘুষের বিনিময়ে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুবিধা দেওয়া হলেও সাধারণ ঋণগ্রহীতাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২০ সালে কেপিএমজি বাংলাদেশকে দিয়ে নিরীক্ষা চালায়। তাতে প্রায় ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকার আর্থিক অসংগতি ধরা পড়ে। এরপর ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড ভেঙে দিয়ে নতুন বোর্ড গঠন করা হলেও আর্থিক অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান দাঁড়ায় ১২৬ কোটি টাকা।
বর্তমানে উত্তরা ফাইন্যান্সের খেলাপি ঋণ প্রায় ১,৩২৮ কোটি টাকা বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য থেকে জানা গেছে।
শেয়ারহোল্ডারদের চিঠি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবস্থান
সম্প্রতি ৭৮ জন শেয়ারহোল্ডার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে চেয়ারম্যানকে পদ থেকে অপসারণ ও তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বিবিসিকে বলেন, “অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত হবে। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
চেয়ারম্যানের প্রতিক্রিয়া
অভিযোগ প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “৭৮ জন নয়, ৮০০ জন অভিযোগ দিলেও কোনো সমস্যা নেই। আমি কোনো অপরাধ করিনি। অভিযোগ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এলে তখন দেখব।”



