দেশের বর্তমান অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের একটি অংশ রাজনৈতিক পুনর্গঠন ও সংগঠন পুনর্বিন্যাসের লক্ষ্যে গোপনে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেছে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো।
নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত ক্লাব, শপিং সেন্টার এবং সরকারি কোয়ার্টারে নিয়মিত গোপন বৈঠক করছে দলটির কিছু প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক আমলারা। এমনকি কিছু বৈঠকে বিদেশি নাগরিকদের উপস্থিতিরও তথ্য উঠে এসেছে গোয়েন্দা নজরদারিতে।
গোপন বৈঠকের কেন্দ্রবিন্দুতে ক্লাব ও শপিং সেন্টার
গত ২৫ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের একটি অভিজাত শপিং সেন্টারে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার গোপন বৈঠকের তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মার্কেটের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে বৈঠকে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের ওপর নজরদারি চলছে।
অন্যদিকে, উত্তরা সংলগ্ন একটি অভিজাত ক্লাবে দীর্ঘদিন ধরেই দলটির কিছু সদস্য এবং সাবেক আমলাদের নিয়মিত আসা-যাওয়ার তথ্য রয়েছে। নদীপথে যাতায়াতের সুবিধার কারণে এসব বৈঠক অনেক সময় নিরাপত্তা বাহিনীর চোখ এড়িয়ে চলে যায়।
বিদেশি নাগরিকদের ব্যবহার এবং অবৈধ অবস্থান
নিরাপত্তা বাহিনীর বরাতে জানা গেছে, রাজধানীর অভিজাত এলাকায় বসবাসরত এক রাশিয়ান নাগরিক—যিনি এক সাবেক এমপির পুত্রবধূ—তার বাসায় রাজনৈতিক সভা হয়ে আসছিল। এ ছাড়া কয়েকটি এনজিও এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৫০০-এরও বেশি বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন বলে দাবি করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। এর মধ্যে ২৪৩ জনের ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট উভয়ই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে।
“ঘোলা পানিতে মাছ শিকার” – নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের শঙ্কা
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় মাঠে নেমেছে ক্ষমতাচ্যুত শক্তিগুলো। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, একাধিক প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও সেনা সদস্যরা কলকাতার অভিজাত এলাকায় আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশে রাজনৈতিক নির্দেশনা পাঠাচ্ছেন।
ডিএমপি ও সরকারের অবস্থান
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী বলেন, “নিষিদ্ধ সংগঠন কিংবা নাশকতা সংশ্লিষ্ট কোনো তৎপরতা বরদাস্ত করা হবে না। ছাত্রলীগসহ সংশ্লিষ্টদের ধরতে অভিযান জোরদার করা হয়েছে।”
গত সপ্তাহে ধানমন্ডি এলাকায় একটি ককটেল বিস্ফোরণসহ আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট একটি বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণের দায়ে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি ব্যক্তিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হবে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার।
বিএনপির অভিযোগ ও রাজনৈতিক উত্তাপ
২৩ আগস্ট বিএনপি নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মহানগর উত্তর কমিটির আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম অভিযোগ করেন, “ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের খুনি ক্যাডাররা এখনো পাড়া-মহল্লায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেন তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না?”
হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ প্রবাহ
সম্প্রতি মেহেরপুর সীমান্তে ৫১ হাজার ডলারসহ একজনকে আটক করার ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে হুন্ডির মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক অর্থায়ন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, এই অর্থ সম্ভবত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে।



