১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনার জীবনে দীর্ঘদিন ধরেই তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। ১৯৬৮ সালের এই দিনে তিনি পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। একই দিনে চলতি বছর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেছে।
১৯৮১ সালেও তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে বড় একটি বাঁক তৈরি হয়—ভারতের দিল্লিতে অবস্থানরত অবস্থায় ওই বছর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। পরে ১৭ মে দেশে ফিরে দলীয় দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
রাজনীতিতে প্রবেশ ও নেতৃত্ব গ্রহণ
পারিবারিক রাজনৈতিক উত্তরাধিকার থেকেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ওঠার পথ তৈরি হয়। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে দলীয় সভাপতি নির্বাচিত হলেও তখন তিনি নির্বাসিত অবস্থায় ছিলেন। দলের ভেতরে একটি অংশের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি শীর্ষপদে আসীন হন।
দেশে ফিরে তিনি দল পুনর্গঠনে মনোযোগী হন। তবে সময়ের সঙ্গে দলীয় অভ্যন্তরে নেতৃত্ব–নির্ভর বলয় তৈরির অভিযোগ এবং অভিজ্ঞ অনেক নেতাকে কোণঠাসা করার সমালোচনাও ওঠে।
৯০–এর আন্দোলন ও পরবর্তী রাজনীতি
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বিভিন্ন দলের সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে তৎকালীন বিরোধী পক্ষের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব সৃষ্টি হয়।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রত্যাশিত ফল না পাওয়ায় তিনি ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলেছিলেন, যদিও নির্বাচনটি দেশের অন্যতম শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।
দীর্ঘ শাসনকাল ও বিতর্ক
২০০৯ সালের নির্বাচনের পর টানা ১৫ বছরের বেশি সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে যুদ্ধাপরাধ মামলার বিচার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে দেশ–বিদেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল, বিরোধী দলের ওপর চাপ ও ধারাবাহিক নির্বাচনী অনিয়মের অভিযোগ তাঁর শাসনামলের বিতর্কিত অধ্যায়গুলোর মধ্যে অন্যতম।
২০২৪ সালের আন্দোলন ও সরকার পরিবর্তন
২০২৪ সালে দেশজুড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে উত্তেজনা সহিংসতায় রূপ নেয়। নিহত শিক্ষার্থীসহ অনেকের মৃত্যুর ঘটনায় দেশে তীব্র জনরোষ তৈরি হয়।
৫ আগস্ট তিনি পদত্যাগ করে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে যান। এরপর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয় এবং পরবর্তী সময়ে জুলাই মাসের ঘটনাগুলোর বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
ট্রাইব্যুনালের রায়
১৫ মাস তদন্ত শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ সম্প্রতি প্রথম মামলার রায় ঘোষণা করেছে। রায়ে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো যাচাই করে দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
পাল্টে যাওয়া রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের বহু নেতা দেশ ত্যাগ করেন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। বিভিন্ন স্থানে দলীয় অফিস ও স্থাপনায় হামলার ঘটনাও ঘটে। ৩২ নম্বরের বাসভবনসহ কয়েকটি স্থাপনা জনতার আক্রমণের মুখে পড়ে।
অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, তারা বিচার ও সংস্কার–কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং জুলাই মাসের ঘটনাবলির পূর্ণ বিচার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।



