ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এবারের আসরে বিশেষ আলোচনায় উঠে এসেছে ফরাসি–তিউনিসীয় পরিচালক কাওথের বেন হানিয়া নির্মিত চলচ্চিত্র ‘দ্য ভয়েস অব হিন্দ রজব’। গাজায় ইসরাইলি সেনাদের হামলায় নিহত ছয় বছরের শিশু হিন্দ রজবের মর্মান্তিক ঘটনার ওপর ভিত্তি করে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে সিলভার লায়ন পুরস্কার জিতেছে। খবর দিয়েছে আল জাজিরা।
বাস্তব ঘটনার ওপর নির্মিত
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে গাজার গাজা সিটি থেকে পরিবারসহ পালানোর চেষ্টা করছিল হিন্দ রজব। গাড়িতে ছিল তার খালা, খালু ও চার চাচাতো ভাইবোন। এ সময় ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে গাড়িটি আক্রান্ত হয়। হামলায় গাড়িতে থাকা সবার মৃত্যু ঘটে। হিন্দ রজব গাড়ির ভেতরে আটকা পড়ে যায়। আতঙ্কে কেঁদে সে ফোন করে প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিকে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চালানো সেই ফোনকলে রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা তাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি ছোট্ট হিন্দকে। হামলায় তাকে উদ্ধার করতে যাওয়া দুই অ্যাম্বুলেন্স কর্মীও নিহত হন।
সিনেমার বিশেষত্ব
চলচ্চিত্র ‘দ্য ভয়েস অব হিন্দ রজব’–এ ব্যবহার করা হয়েছে সেই এক ঘণ্টার প্রকৃত ফোনকলের অডিও রেকর্ড। পরিচালক কাওথের বেন হানিয়া বাস্তব ঘটনার এই ভয়াবহ রূপকে চলচ্চিত্রে রূপ দিয়ে তুলে ধরেছেন গাজার যুদ্ধের নির্মমতা ও মানবিক বিপর্যয়।
ভেনিস উৎসবে সাড়া
গত বুধবার ভেনিসে ছবিটির প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয়। প্রদর্শনী শেষে দর্শকরা দাঁড়িয়ে টানা ২৩ মিনিট করতালি দেন—যা এবারের উৎসবের সবচেয়ে দীর্ঘ স্ট্যান্ডিং ওভেশন। ছবিটি উৎসবের সবচেয়ে আলোচিত সিনেমায় পরিণত হয়।
নির্মাতার প্রতিক্রিয়া
পুরস্কার গ্রহণকালে আবেগাপ্লুত হয়ে কাওথের বেন হানিয়া বলেন—
“এটি শুধু হিন্দ রজবের গল্প নয়, বরং গাজায় গণহত্যার শিকার হওয়া সবার গল্প। সিনেমা হিন্দকে ফিরিয়ে আনতে পারবে না, তবে তার কণ্ঠস্বর সংরক্ষণ করতে পারে এবং সেই প্রতিধ্বনি সীমান্ত পেরিয়ে ছড়িয়ে যেতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত হিন্দের কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হতে থাকবে।
গাজার প্রেক্ষাপট
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১৮ হাজারের বেশি শিশুসহ ৬৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক মহল গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি হামলার তীব্র নিন্দা জানালেও যুদ্ধ থামেনি। এই প্রেক্ষাপটে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে হিন্দ রজবকে নিয়ে নির্মিত এই সিনেমার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ফিলিস্তিনের দুঃখবেদনাকে বিশ্বমঞ্চে আরও একবার তুলে ধরল।



