কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর ৬ নম্বর জেটিঘাট। আধা কিলোমিটারজুড়ে সারি সারি নোঙর করা অন্তত ৭০০ মাছ ধরার ট্রলার। কিন্তু ভরা মৌসুমেও সাগরে ইলিশের দেখা নেই। অলস সময় কাটাচ্ছেন হাজারো জেলে।
গত শনিবার দুপুরে একটি ট্রলারে পাশাপাশি বসেছিলেন নুর হাসান, আবু তৈয়ুব মাঝি, মো. শফি ও আবদুল কাইয়ুম মাঝি। আট থেকে বারো বছরের অভিজ্ঞ এই চার জেলের সবারই একই অভিমান— “সাগরে ইলিশ নেই।” কয়েক বছর আগেও বঙ্গোপসাগরে জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ত। সেই আয়ে চলত সংসার ও সন্তানদের পড়াশোনা। এখন সংসার চালানোই দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাজারে চড়া দাম, তবু মাছ অপ্রতুল
জেটিঘাটের উত্তর পাশে নুনিয়াছটা ফিশারি ঘাটে বেলা ১১টার দিকে ভিড়ল ছয়–সাতটি ট্রলার। এর মধ্যে দুটি ট্রলারে ধরা পড়েছে মাত্র ৭০ থেকে ১৩০টি ইলিশ। প্রতিটির ওজন ৮০০–৯০০ গ্রাম। ব্যবসায়ীরা কিনলেন কেজি প্রতি ২ হাজার ৩০০ টাকায়। তবে শহরের বাহারছড়া ও কানাইয়ার বাজারে এই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায়।
জেলেপল্লিতে হাহাকার
জেলে নুর হাসান (৩৭) বলেন, “তিন মাসে অন্তত ১০ বার সাগরে গেছি। প্রতিবার ফিরেছি ১০০–২০০ ইলিশ নিয়ে। অথচ একবার ট্রলার নামাতে খরচ হয় প্রায় চার লাখ টাকা। মাছ বিক্রি করে আয় হয় মাত্র এক লাখ।”
ফলে ধারদেনায় চলছে সংসার। অনেক পরিবারে একবেলা খাবারও জুটছে না।
গবেষকদের অভিমত
গবেষকেরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরে বৃষ্টির ধরন পাল্টে গেছে। ঘন ঘন নিম্নচাপ তৈরি হচ্ছে, ফলে ইলিশ আসছে না আগের মতো। অন্যদিকে দেশি–বিদেশি ট্রলার, ট্রলিং জাল ও নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের কারণে নির্বিচার মাছ আহরণ বেড়েছে। এতে বিপন্ন হচ্ছে সামুদ্রিক মাছের প্রজনন।
ট্রলার মালিক সজীবুল ইসলাম (৫২) জানান, “১৪ বছর ধরে ইলিশ ধরছি, এমন সংকট কখনো দেখিনি। আগের মতো আর মাছ পাওয়া যায় না।”
কমছে উৎপাদন
কক্সবাজার মৎস্য অবতরণকেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী—
- ২০২২–২৩ অর্থবছরে ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৩,৯৭৫ মেট্রিক টন
- ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ২,৫৫৬ মেট্রিক টন
- ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ১,৬২৮ মেট্রিক টন
- চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের আগস্ট পর্যন্ত মাত্র ২৬৭ মেট্রিক টন ইলিশ বিক্রি হয়েছে
মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম রব্বানী জানান, ইলিশ আহরণ কমে যাওয়ায় সরকারের রাজস্বও কমছে।



