আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী প্রার্থী হতে যাচ্ছেন, যাদের অনেকেই রাজনীতিতে এসেছেন উত্তরাধিকার সূত্রে। বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে আসন্ন নির্বাচনে যারা প্রার্থী হতে চান, তাদের বেশিরভাগই দেশের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, সাবেক মন্ত্রী হারুণার রশীদ খান মুন্নুর মেয়ে আফরোজা খানম রিতা, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমানের মেয়ে অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল, সাবেক মহাসচিব কেএম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে শামা ওবায়েদ— সবাই আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এছাড়া সাবেক মহাসচিব ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদারের মেয়ে সালিমা তালুকদার আরুনী জামালপুর-৪ আসনে, বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা সিলেট-২ আসনে, আর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস ঢাকা-৯ আসনে লড়তে চান।
রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র নতুন কিছু নয়। উপমহাদেশের রাজনীতিতেও এর দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ভারতের ইন্দিরা গান্ধী, পাকিস্তানের বেনজীর ভুট্টো, ফিলিপাইনের কোরাজন একুইনো বা বাংলাদেশের শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মতো নেত্রীরাও পারিবারিক উত্তরাধিকারের ধারায় রাজনীতিতে এসেছেন। তবে এর মধ্যেও নিজস্ব নেতৃত্বগুণে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছেন অনেকে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পরিবারতন্ত্রের পরিচয়ে রাজনীতিতে এলেও নিজের নেতৃত্বে বিএনপিকে সংগঠিত করেছেন— যা তাকে স্বতন্ত্র রাজনৈতিক মর্যাদায় আসীন করেছে। অন্যদিকে শেখ হাসিনা পিতার উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনীতিতে এসে বহু বছর ক্ষমতায় থেকেছেন।
রাজনীতিতে নতুন প্রজন্মের নারী নেতৃত্ব হিসেবে যাদের নাম এখন আলোচনায়, তাদের মধ্যে রয়েছেন নিপুণ রায় চৌধুরী, শিরীন সুলতানা, মাহরীন খান, হাসিনা আহমেদ, রুমানা মাহমুদ প্রমুখ।
জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতেও সক্রিয় আছেন কিছু নারী নেতা, যদিও দলটি এখনও কোনো নারী প্রার্থী ঘোষণা করেনি। দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানের স্ত্রী ডা. আমেনা এবং নায়েবে আমির ডা. তাহেরের স্ত্রী ডা. হাবিবা চৌধুরী সুইট মহিলা জামায়াতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

অন্যদিকে নাগরিক জাতীয় পার্টি (এনসিপি) নারীনেতৃত্বে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির ৩০ শতাংশ পদেই নারী রয়েছেন। আসন্ন নির্বাচনে ১৫ শতাংশ নারীকে মনোনয়ন দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে দলটি। এনসিপির আলোচনায় থাকা নারী প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন—ডা. তাসনীম জারা, সামান্তা শারমিন, নুসরাত তাবাসসুম, মনিরা শারমিন ও ডা. মাহমুদা মিতু।
রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারপারসন ড. সাবিহা ইসলাম রোজী বলেন,
“রাজনৈতিক পরিবারের মেয়েরা রাজনীতিতে আসছেন—এটি ইতিবাচক দিক। পরিবার থেকে উৎসাহ পেলে তারা নেতৃত্বে আরও দক্ষ হতে পারেন, যা রাষ্ট্র পরিচালনায়ও সুফল আনবে।”
গবেষণায়ও দেখা গেছে, সংসদে নারীর উপস্থিতি বাড়লে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও জলবায়ু নীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেন, শুধু নারী প্রার্থী বৃদ্ধি নয়—গুরুত্বপূর্ণ হলো নেতৃত্বে তাদের স্বাধীনতা ও কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।



