বর্তমান সময়ে দৃষ্টিশক্তি সংশোধনের সবচেয়ে কার্যকর ও নিরাপদ পদ্ধতিগুলোর মধ্যে ল্যাসিক সার্জারি (LASIK Surgery) অন্যতম। এটি একধরনের উন্নত লেজার চিকিৎসা, যার মাধ্যমে চোখের কর্নিয়ার আকার পরিবর্তন করে দৃষ্টিশক্তির ত্রুটি স্থায়ীভাবে ঠিক করা হয়।
মায়োপিয়া (কাছের জিনিস স্পষ্ট দেখা), হাইপারমেট্রোপিয়া (দূরের জিনিস স্পষ্ট দেখা) এবং অ্যাস্টিগমাটিজম (দৃষ্টিতে বিকৃতি)—এই তিন ধরনের দৃষ্টি সমস্যার স্থায়ী সমাধান দেয় ল্যাসিক সার্জারি।
ল্যাসিক সার্জারির প্রক্রিয়া
সার্জারির সময় প্রথমে ফেমটোসেকেন্ড লেজার বা সূক্ষ্ম যন্ত্র দিয়ে কর্নিয়ার উপরে একটি পাতলা স্তর (ফ্ল্যাপ) তৈরি করা হয়।
এরপর এক্সাইমার লেজার দিয়ে কর্নিয়ার ভেতরের নির্দিষ্ট অংশে লেজার প্রয়োগ করে এর আকৃতি সংশোধন করা হয়।
শেষে ফ্ল্যাপটি আগের জায়গায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
পুরো প্রক্রিয়াটি ১০–১৫ মিনিটের মধ্যে সম্পন্ন হয় এবং এটি সম্পূর্ণ ব্যথামুক্ত।
কারা ল্যাসিক সার্জারি করতে পারবেন
ল্যাসিক করাতে চাইলে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে—
- বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে।
- চোখের পাওয়ার অন্তত এক বছর ধরে স্থিতিশীল থাকতে হবে।
- কর্নিয়া যথেষ্ট পুরু ও সুস্থ হতে হবে।
- চোখে কোনো সংক্রমণ, কর্নিয়াল রোগ বা গ্লুকোমা থাকা যাবে না।
- গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী নারীদের জন্য এই সার্জারি করা যাবে না।
ল্যাসিক সার্জারির সুবিধা
ল্যাসিক সার্জারির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি চশমা ও কনট্যাক্ট লেন্সের স্থায়ী বিকল্প।
সার্জারির পরপরই অধিকাংশ রোগী পরিষ্কারভাবে দেখতে পারেন এবং কয়েক দিনের মধ্যেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন।
এতে ব্যথা খুবই কম, কোনো সেলাই লাগে না, এবং আরোগ্য সময়ও অল্প।
সম্ভাব্য ঝুঁকি ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
যদিও এটি নিরাপদ প্রক্রিয়া, তবুও কিছু সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে—
- চোখে শুষ্কভাব বা অস্বস্তি
- আলোতে ঝলকানি বা রাতের দৃষ্টিতে অস্পষ্টতা
- বিরল ক্ষেত্রে সংক্রমণ বা কর্নিয়া পাতলা হয়ে যাওয়া
তবে অভিজ্ঞ চক্ষুবিশেষজ্ঞ ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে এই ঝুঁকি প্রায় শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব।
সার্জারির পর যত্ন
সার্জারির পর প্রথম কয়েক দিন চোখে হালকা জ্বালাপোড়া, পানি পড়া বা ঝাপসা দেখা স্বাভাবিক।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চোখে ড্রপ ব্যবহার করা, এবং ধুলাবালু, পানি ও রোদ থেকে চোখ রক্ষা করা জরুরি।
এ ছাড়া নিয়মিত ফলো-আপ ভিজিট করানোও প্রয়োজন।
পরামর্শ দিয়েছেন:
চক্ষুবিশেষজ্ঞ ও সার্জন,
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা।



