শুক্রবার, নভেম্বর ২১, ২০২৫
spot_img
Homeশিক্ষাইতিবাচক অপেক্ষায় ছাত্রদল, জয় নিয়ে আশাবাদী শিবির

ইতিবাচক অপেক্ষায় ছাত্রদল, জয় নিয়ে আশাবাদী শিবির

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন। নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচনে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের মধ্যে। দুই সংগঠনই প্রচারণায় জোর দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জয় নিয়ে আশাবাদী শিবির, আর ইতিবাচক কোনো ফলাফলের অপেক্ষায় ছাত্রদল।

রাকসুতে মোট পদ ২৩টি। এর মধ্যে আটটি সম্পাদক, আটটি সহসম্পাদক ও চারটি কার্যকরী পদ রয়েছে। রাকসুর ২৩ পদে ২৪৭ জন প্রার্থী রয়েছেন। সিনেট ছাত্রপ্রতিনিধি নির্বাচনে পাঁচ পদে ৫৮ প্রার্থী, আর ১৭টি হলে হল সংসদে ১৫টি করে পদে মোট প্রার্থী ৫৯৭ জন। মোট ভোটার শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮,৯০১।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের ভরাডুবির পর, রাকসুতেও একই পরিণতি এড়াতে বৈচিত্র্যময় প্যানেল ঘোষণা করেছে তারা। গত ৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই প্যানেল ঘোষণা করা হয়।

প্যানেলে ক্লিন ইমেজধারী, নির্যাতিত ও বহুমাত্রিক পরিচয়ে শিক্ষার্থীরা প্রাধান্য পেয়েছেন। এতে রয়েছেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়, রাজশাহী ফুটবল দলের গোলকিপার, ব্যান্ড সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা, ডিনস পুরস্কারজয়ী শিক্ষার্থী, সংস্কৃতিকর্মী ও জনপ্রিয় সাধারণ শিক্ষার্থী। শীর্ষ তিন পদের মধ্যে একটিসহ মোট চার পদে নারী প্রার্থী রাখা হয়েছে।

ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর তার নম্র স্বভাব, সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখ এবং ইতিবাচক নেতৃত্বের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করেছেন। জিএস পদে আছেন নাফিউল জীবন, যিনি ছাত্রলীগের হাতে বারবার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এজিএস পদে জাহিন বিশ্বাস এষা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পরিচিত মুখ।

নাফিউল জীবন বলেন, “ডাকসু ও জাকসুর অভিজ্ঞতা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। এবার নতুন উদ্যম, শিক্ষার্থীদের আস্থা ও সমর্থন নিয়ে রাকসুতে ইতিবাচক ফলাফলের বিষয়ে আশাবাদী।”

ভিপি প্রার্থী আবীর বলেন, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আচার-আচরণ, চলাফেরা ও ক্যাম্পাস সংস্কৃতি অন্যদের থেকে ভিন্ন। তাই রাকসুর নির্বাচন ঢাবি বা জাহাঙ্গীরনগরের নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করা সঠিক হবে না। আমরা বিশ্বাস করি, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেল রাকসু নির্বাচনে বিজয়ী হবে।”

শিবিরের প্রচারণা ও বৈচিত্র্য

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্রশিবির প্রভাবশালী। এবার তারা ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ নামে একটি বৈচিত্র্যময় ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল গঠন করেছে। ভিপি পদে রয়েছেন রাবি ছাত্রশিবির সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ। বাকি পদগুলোতে নানা সংগঠন, শ্রেণি ও সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। জিএস পদে রয়েছেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর সাবেক সমন্বয়ক ফাহিম রেজা, এজিএস পদে ‘সোচ্চার স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক’-এর সভাপতি সালমান সাব্বির। প্যানেলে তিনজন নারী শিক্ষার্থী এবং একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থী রয়েছেন। এছাড়া জুলাই আন্দোলনে চোখ হারানো দ্বীপ মাহবুবকেও প্যানেলে রাখা হয়েছে।

সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী জাহিদ হাসান জোহা গম্ভীরা গানের মাধ্যমে কৃষক, শিক্ষক ও গায়ক সেজে ক্যাম্পাস মাতাচ্ছেন এবং শিবিরের ইশতেহার শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরছেন। এটি শিবিরের সৃজনশীল প্রচারের অন্যতম উদাহরণ।

শিবিরের অনুমিত ‘নিজস্ব ভোট’ প্রায় ৪,৫০০। ছাত্রী সংস্থার কারণে ছয়টি নারী হলের ভোটারও শিবিরের দিকে থাকতে পারে। ভোটারের ৪০ শতাংশ আবাসিক হলে, বাকি ৬০ শতাংশ আশপাশে, যেখানে শিবিরের সামাজিক প্রভাব রয়েছে।

ভিপি প্রার্থী জাহিদ বলেন, “ডাকসু ও জাকসুতে শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রতি আস্থা রেখেছেন। তারা পরিবর্তন চান; সৎ, যোগ্য ও সাহসী নেতৃত্ব চান। আমরা রাকসুতেও জয়ের বিষয়ে আশাবাদী। এখানে সব মতাদর্শের শিক্ষার্থী থাকবেন; নারী শিক্ষার্থী ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরাও সম্মান-শ্রদ্ধা পাবেন। আমরা শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে চাই।”

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments