রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে ‘জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি: গণভোট ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ইসলামিক ইউনিভার্সিটির সাবেক ভিসি প্রফেসর মো. কোরবান আলীর সভাপতিত্বে আয়োজিত এ সেমিনারে কী-নোট প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন। সেমিনারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জাতীয় নেতা, সাবেক সচিব, সাবেক ভিসি, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। বক্তারা জুলাই জাতীয় সনদে পিআর (Proportional Representation) পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করে নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট সম্পন্ন করার দাবি জানান।
প্রধান অতিথি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে না পারলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যর্থ হবে। জুলাইয়ে যারা আত্মত্যাগ করেছেন, তাদের রক্ত বৃথা যাবে। তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে মনোনয়ন বাণিজ্য ও পারিবারিক রাজনীতি বন্ধ হবে। এই পদ্ধতিই স্বৈরাচারী রাজনীতির অবসান ঘটাতে পারে।
বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির জন্য গণভোটের বিষয়ে সরকার একমত হলেও তারা সময় নিয়ে টালবাহানা করছে। জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে করা সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করে তিনি নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট সম্পন্ন করার দাবি জানান। তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতিই সবচেয়ে জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থা। যারা বলে তারা পিআর বোঝে না, তারা রাজনীতি নিয়ে পড়াশোনা করে না। পড়তে না পারলে আমরা বুঝিয়ে দিতে প্রস্তুত।
তিনি আরও বলেন, কিছু উপদেষ্টা একটি দলের স্বার্থে কাজ করছেন এবং প্রশাসনে দলীয় নিয়োগ দিচ্ছেন, এতে প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, সংস্কার ও বিচার ছাড়া নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলে জনমনে সংশয় সৃষ্টি হবে। জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার আগে অমীমাংসিত বিষয়গুলো মীমাংসা করতে হবে এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস আহমাদ বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন না হলে শহীদদের রক্তের সঙ্গে গাদ্দারি করা হবে। জাতির স্বার্থে জামায়াতে ইসলামীর উত্থাপিত পিআর পদ্ধতিসহ পাঁচ দফা দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি ড. এ.এইচ.এম. হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার কাতারে না এসে ব্যর্থতা ঢাকতে একটি দল জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তিনি বলেন, সংস্কারের আইনি ভিত্তি না দিলে জুলাই সনদ কেবল এক টুকরো কাগজে পরিণত হবে এবং পুরোনো ব্যবস্থায় ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান ঘটবে।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির আবদুল মাজেদ বলেন, হাসিনার তৈরি সংবিধান দিয়ে দেশ চলতে পারে না। এই সংবিধানে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিকল্প নেই।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান বলেন, জুলাই সনদের বাস্তবায়নের উপায় স্পষ্ট না করলে সেটি মূল্যহীন এক টুকরো কাগজে পরিণত হবে। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট করা অবাস্তব ও অকার্যকর হবে। তাই নভেম্বরের মধ্যেই আলাদা গণভোট আয়োজন করে জুলাই সনদে পিআর পদ্ধতির প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন্দ, মুফতি ফখরুল ইসলাম, সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল লতিফ মাছুম, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ফখরুল ইসলাম, সাংবাদিক মাসুমুর রহমান খলিলী, অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম, এডভোকেট শেখ আতিয়ার রহমান, ব্রিগেডিয়ার (অব.) মাহমুদুল হাসান, প্রফেসর কাজী মিনহাজুল রহমান, প্রফেসর ডা. কর্নেল (অব.) জেহাদ খান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সাবেক সচিব ড. মো. জাহেদুল ইসলাম প্রমুখ। সেমিনারটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম।



