আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাবনার পাঁচটি আসনে প্রার্থী বাছাই নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীতে চলছে তীব্র আলোচনার ঝড়। জামায়াত ইতোমধ্যে পাঁচটি আসনেই সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই করে ফেলেছে। বিএনপি চারটি আসনে প্রাথমিক প্রার্থী ঠিক করলেও দু’টি আসনে দলীয় সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ বঞ্চিতদের অনুসারীরা। এ অবস্থায় শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহী প্রার্থীই হতে পারে বিএনপির বড় মাথাব্যথা। অন্যদিকে জামায়াতে বড় ধরনের বিভেদ নেই, তবে পাবনা–৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আবদুস সোবহানের ছেলে নেছার আহমেদ নান্নুর ঘোষণা দলটির জন্য নতুন চিন্তার কারণ হয়েছে।
পাবনা-১: জামায়াত এগিয়ে, বিএনপি দ্বিধায়
সাঁথিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত পাবনা–১ আসনে জামায়াতের শক্তিশালী ভোটব্যাংক রয়েছে। ১৯৯১ ও ২০০১ দু’টি নির্বাচনেই জয়ী ছিলেন দলের সাবেক আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। এবার তাঁর ছেলে নাজিবুর রহমান মোমেনকে প্রার্থী করছে দলটি। বিএনপি এখনও এই আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি। দলীয় সূত্র বলছে—শক্ত প্রার্থী না দিলে এখানে জামায়াতই এগিয়ে থাকবে।
পাবনা-২: বিএনপির দখল পুনরুদ্ধারের লড়াই
সুজানগর ও বেড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে বিএনপির নজর বিশেষভাবে বেশি। সম্ভাব্য প্রার্থী কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কে এম সেলিম রেজা হাবিব। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী হেসাব উদ্দিন। এছাড়া এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস ও গণঅধিকার পরিষদও পৃথক প্রার্থী দিতে পারে। ফলে এখানে থাকবে বহুপ্রার্থী লড়াই। সামগ্রিকভাবে বিএনপি এগিয়ে থাকলেও জামায়াত ছাড় দিতে নারাজ।
পাবনা-৩: বিএনপিতে তীব্র অভ্যন্তরীণ বিরোধ
চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে জামায়াত প্রায় নিরবচ্ছিন্ন ঐক্য নিয়ে মাঠে আছে। তাদের প্রার্থী আলী আছগার।
কিন্তু বিএনপির ভেতরে চরম বিরোধ। দলীয় প্রার্থী হিসেবে কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের নাম ঘোষণার পর থেকেই স্থানীয় নেতাকর্মীদের একাংশ প্রতিবাদে সরব। সাবেক এমপি কে এম আনোয়ারুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসাদুল ইসলাম হীরা এবং হাসানুল ইসলাম রাজার অনুসারীরা তুহিনকে মানতে নারাজ। পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে এখানে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়ানোর সম্ভাবনা প্রবল।
পাবনা-৪: বিএনপিতে আরও একটি বিদ্রোহের ঝুঁকি
ঈশ্বরদী–আটঘরিয়া নিয়ে গঠিত আসনটিতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব। তবে ঈশ্বরদীর সাবেক পৌর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুর অনুসারীরা হাবিবকে প্রার্থী হিসেবে মানছেন না। পিন্টু নিজেও স্বতন্ত্র হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে জেলা আমির আবু তালেব মণ্ডলকে ঘিরে স্থানীয় নেতাকর্মীরা একমত। আটঘরিয়ায় জামায়াতের প্রচুর ভোট থাকায় এই আসনে বিএনপির বিদ্রোহী না থাকলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে দুই দলের মধ্যে। আর বিদ্রোহী থাকলে সুবিধা নিতে পারে জামায়াত।
পাবনা-৫: বিএনপির জনপ্রিয় প্রার্থী, জামায়াতের বিভ্রাট
সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত পাবনা–৫ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। এলাকায় তাঁর গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা নায়েবে আমির ইকবাল হুসাইন।
কিন্তু বড় ধাক্কা এসেছে জামায়াতের জন্য—এ আসনের সাবেক এমপি আবদুস সোবহানের ছেলে নেছার আহমেদ নান্নু স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। একসময় জামায়াত–দুর্গ হিসেবে পরিচিত এই আসনে এবার নান্নুই হয়ে উঠতে পারেন বড় সমীকরণ।
সার্বিক চিত্র
পাবনার রাজনীতিতে বিএনপি যে অভ্যন্তরীণ বিরোধে জর্জরিত—তা এবার প্রার্থিতা ঘোষণা থেকেই স্পষ্ট। অন্যদিকে জামায়াতে বিভাজন কম থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী নান্নুর কারণে ৫ নম্বর আসনে তারা চাপের মুখে।
এই পাঁচ আসনের নির্বাচন শেষ পর্যন্ত নির্ভর করতে পারে দুটি বিষয়ের ওপর—
- বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীদের শেষ সিদ্ধান্ত
- জামায়াত–বিএনপি জোট (৮ দলীয় মঞ্চ) আসন–সমঝোতা
চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণার আগ পর্যন্ত তাই উত্তাপ আরও বাড়বে বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা।



