দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে এল আদালতের রায়ে। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ ত্রয়োদশ সংশোধনী পুনর্বহাল করে এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন। দীর্ঘ ১৩ বছর পর আবারও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থা চালুর পথ খুলে গেল।
রায় ঘোষণার আগে গত ১১ নভেম্বর শুনানি শেষে আজকের দিন নির্ধারণ করেছিলেন আদালত। পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের অন্যান্য বিচারপতি হলেন—বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি এস. এম. এমদাদুল হক, বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান এবং বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।
রিভিউ আবেদনের পর আপিলের অনুমতি
২০১১ সালে দেওয়া ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল–সংক্রান্ত রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনে আপিলের অনুমতি দেয় আদালত গত ২৭ আগস্ট। পরে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ নাগরিক, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জামায়াতে ইসলামের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার পৃথকভাবে আপিল করেন।
২১ অক্টোবর শুরু হওয়া শুনানি টানা ২২, ২৩, ২৮, ২৯ অক্টোবর এবং ২, ৪, ৫ ও ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। সব যুক্তি–তর্ক শেষে আজ রায় ঘোষণা করা হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইতিহাস
- ১৯৯৬: ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত।
- ১৯৯8: এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট।
- ২০০৪: হাইকোর্ট রিট খারিজ করে বৈধ ঘোষণা করে।
- ২০০৫: রিট আবেদনকারীদের আপিল।
- ২০১১ (১০ মে): আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক বাতিল ঘোষণা করে।
- ২০১১ (৩০ জুন): পাস হয় পঞ্চদশ সংশোধনী; তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বিলোপ।
সরকার পরিবর্তনের পর প্রেক্ষাপট
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফেরানোর দাবিতে বিভিন্ন নাগরিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তি রিভিউ আবেদন করেন। সর্বশেষ নওগাঁর এক বীর মুক্তিযোদ্ধাও আবেদন করেন।
রায়ের তাৎপর্য
নতুন রায়ের মাধ্যমে দেশে ভবিষ্যৎ জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আয়োজনের সাংবিধানিক ভিত্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলো। রাজনৈতিক অঙ্গনে এই রায়কে ‘ট্রান্সফরমেশনাল মাইলফলক’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।



