সাফল্যের সাথে ক্রিয়াশীল সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিরামহীন বৈঠক ও ঐকমত্যে পৌঁছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ তৈরি ও বাস্তবায়নের রূপরেখা নির্ধারণ করায় জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এক বার্তায় তিনি এই অভিনন্দন জানান। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং পরবর্তীতে এ তথ্য নিশ্চিত করে।
বাংলাদেশে একটি স্থায়ী জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কারের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসকে সভাপতি করে ঐকমত্য কমিশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি এবং গতকাল, ৩১ অক্টোবর এর মেয়াদ শেষ হয়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদ আমাদের ঐতিহাসিক অর্জন। এই সনদ আমাদের জাতির এক মূল্যবান দলিল, যা আমাদের আগামী জাতীয় নির্বাচনের পথকে কেবল সুগমই করবে না, জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে এবং আমাদের গণতন্ত্রকে সুসংহত করবে।”
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, জনগণ প্রত্যাশায় আছে জাতীয় জীবনে এমন কিছু পরিবর্তন দেখার জন্য, যা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাবে, স্বৈরাচারের আগমন ঘটতে দেবে না এবং সবার নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করবে। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, এই সংস্কার প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরাই কাজ করেছে এবং একমত হয়েছে, বাইরে থেকে কেউ কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়নি। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, অতীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংলাপে বিদেশিদের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আসতে দেখা গেলেও, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে যে, তাঁদের নিজেদের সংকট নিজেদেরই সমাধান করতে হবে। এর ফলেই সকল রাজনৈতিক দল এক কাতারে এসে এই জাতীয় ঐক্যকে বিশ্ববাসীর দরবারে তুলে ধরেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলকে এবং তাঁদের নেতৃবৃন্দকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি উল্লেখ করেন, এই জুলাই সনদ সারাবিশ্বের জন্যই একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, “পৃথিবীর আর কোথাও এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এটা পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে এক উজ্জ্বল ঘটনা হয়ে থাকবে।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশও সংকটকালীন সময়ে দেশগঠনের পদক্ষেপ হিসেবে ‘ঐকমত্য কমিশন’ গঠনের কথা বিবেচনা করবে। প্রধান উপদেষ্টা কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজসহ সকল সদস্য এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদেরও ধন্যবাদ জানান।
তবে এই সাফল্যের মাঝেও তিনি একটি গুরুতর সতর্কবার্তা দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের সকলের মনে রাখতে হবে, যে অভূতপূর্ব ঐক্য আমাদের মাঝে রয়েছে রাষ্ট্র সংস্কারে এই জাতীয় ঐক্য আমাদের ধরে রাখতেই হবে। কারণ ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী এ জাতিকে বিভক্ত করতে সর্বশক্তি নিয়োজিত করেছে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, এ দেশকে বাঁচাতে হলে এবং মহা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে সকল রাজনৈতিক দল ও পক্ষের মধ্যে একতা ধরে রাখা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।



