প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিদের জাতীয় নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করতে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এ অ্যাপ উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে চার নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সাতটি অঞ্চলে ধাপে ধাপে নিবন্ধন
ইসি জানিয়েছে, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রবাসী এলাকায় ভোটার নিবন্ধনকে সুসংগঠিত করতে বিশ্বকে সাতটি ভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে।
নিবন্ধনের সময়সূচি:
- পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা: ১৯–২৩ নভেম্বর
- উত্তর আমেরিকা, ওশেনিয়া: ২৪–২৮ নভেম্বর
- ইউরোপ: ২৯ নভেম্বর–৩ ডিসেম্বর
- মধ্যপ্রাচ্য: ৪–৮ ডিসেম্বর
- দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া: ৯–১৩ ডিসেম্বর
- মধ্যপ্রাচ্য (সৌদি ছাড়া): ১৪–১৮ ডিসেম্বর
- সরকারি কর্মকর্তা, নির্বাচনী কর্মকর্তা, আইনগত হেফাজতের ভোটার: ১৯–২৩ ডিসেম্বর
সিইসি জানান, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে, যাতে নির্বাচনকে ঘিরে আলাদা ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা সম্ভব হয়।
“এটি প্রবাসী ভোটের নতুন যুগের সূচনা”—সিইসি
সিইসি তাঁর বক্তব্যে বলেন,
“প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা গণতন্ত্রের বিস্তারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এত বছর ধরে তাঁরা ভোট দেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলেন। আজকের এই অ্যাপ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে তাঁদের সেই বঞ্চনার অবসান ঘটল।”
তিনি আরও বলেন, দেশের প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ প্রবাসীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ কর্মক্ষেত্রের কারণে দেশে ভোট দিতে পারেন না। তাই প্রবাসী ভোটার তালিকা একটি আলাদা শক্ত জনমত তৈরি করবে।
নিবন্ধনে তিন প্রধান চ্যালেঞ্জ: ইসি সানাউল্লাহ
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন—
- নিম্ন নিবন্ধন হার: বিশ্বে পোস্টাল ভোটে গড় নিবন্ধন হার মাত্র ২.৭%।
- ব্যালট নষ্ট হওয়ার হার: বৈশ্বিক গড় ওয়েস্টেজ ২৪%, অর্থাৎ প্রতি চারটি ব্যালটের একটি বাতিল হয়।
- সাইবার নিরাপত্তা: অ্যাপ–ভিত্তিক এই প্রক্রিয়া নিয়ে পৃথিবীর অনেক দেশ প্রথমে দীর্ঘ সময় পরীক্ষামূলকভাবে চালায়। বাংলাদেশে পরীক্ষার সময় ছিল খুব কম।
তবে তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, যেকোনো ধরনের প্রযুক্তিগত বা নিরাপত্তাজনিত সমস্যা যাতে ভোটকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে—সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি থাকবে।
যেভাবে ভোট দেবেন প্রবাসীরা
অ্যাপ চালুর পর ভোটিং প্রক্রিয়াটি হবে নিম্নরূপ—
- অ্যাপে নিবন্ধন:
– মোবাইল নম্বর
– নিজের ছবি
– এনআইডি হাতে রাখা অবস্থায় ছবি
– এনআইডির আলাদা ছবি
– পাসপোর্টের তথ্য (থাকলে)
– বর্তমান বিদেশি ঠিকানা - নিবন্ধন যাচাই: রিটার্নিং কর্মকর্তা যাচাই শেষে আলাদা প্রবাসী ভোটার তালিকা তৈরি করবেন।
- ব্যালট পাঠানো: নির্ধারিত ঠিকানায় ব্যালট পেপার ও ফিরতি খাম পাঠানো হবে।
- অ্যাপে প্রার্থী তালিকা দেখা: প্রতীক নিশ্চিত করে ব্যালটে মার্কিং করবেন।
- ফিরতি খামে পাঠানো: নিকটবর্তী পোস্টবক্স বা ডাকঘরে জমা দেওয়ার পর তা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পৌঁছাবে।
- নির্বাচনের দিন গণনা: সব ব্যালট সরকারি কোষাগারে সংরক্ষণ থাকবে, গণনা হবে ভোটের দিন।
২০ লাখ ব্যালট ছাপানোর প্রস্তুতি
ইসি জানিয়েছে—
- ১৪৩ দেশের প্রায় ৫০ লাখ ভোটারকে টার্গেট করা হয়েছে।
- শুরুতে ২০ লাখ ব্যালট ছাপানো হবে। প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হবে।
- পোস্টাল ব্যালটে শুধু প্রার্থীর প্রতীক থাকবে, নাম থাকবে না।



