নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৫
বাংলাদেশ জেলের নাম পরিবর্তন করে ‘কারেকশন সার্ভিসেস বাংলাদেশ’ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) কারা সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন।
তিনি জানান, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দিদের চাপ সামলাতে নতুন দুটি কেন্দ্রীয় কারাগার ও চারটি জেলা কারাগার চালু করা হয়েছে। অধিকতর সমন্বয়ের জন্য ঢাকা বিভাগকে ভেঙে দুটি বিভাগ করা হয়েছে।
লোকবল সংকট নিরসনে সরকার ইতোমধ্যে ১ হাজার ৮৯৯ নতুন পদ অনুমোদন দিয়েছে এবং আরও ১ হাজার ৫০০ জনবল চাওয়া হয়েছে। কারা সদরদপ্তর ও বিভাগীয় কার্যালয়গুলো পুনর্গঠন করে নতুন জনবল পদায়ন করা হয়েছে।
আইজি প্রিজন বলেন, “কারা অধিদপ্তরের কার্যক্রমকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সব কারাগারকে ফাইবার নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে, চালু করা হয়েছে ডিজিটাল এটেনডেন্ট সিস্টেম ও টিম ট্রেকার।”
কারা নিরাপত্তায় ইতোমধ্যে মোবাইল জ্যামিং সিস্টেম, বডি স্ক্যানার, লাগেজ স্ক্যানার, গ্রাউন্ড সুইপিং মেশিন ও মোবাইল ডিটেক্টর ব্যবহৃত হচ্ছে। পাশাপাশি এআই-নির্ভর সিসিটিভি, গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা সদস্যদের বডি ক্যামেরা এবং নিরাপত্তা জোরদারে নতুন অস্ত্র কেনার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
বন্দিদের কল্যাণে নেওয়া উদ্যোগের কথা তুলে ধরে আইজি প্রিজন বলেন, টেলিফোন কল ও সাক্ষাৎ প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজ করা হয়েছে। হটলাইন ১৬১৯১ চালু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে বন্দিদের সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তাদের খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে এবং বিশেষ দিবসে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবায় উন্নতির জন্য কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বন্দিদের পুনর্বাসন ও সংশোধনের লক্ষ্যে ধর্মীয় শিক্ষা ও কাউন্সেলিং কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।
কারা কর্মীদের জন্যও নেওয়া হয়েছে বিশেষ পদক্ষেপ। অবসরপ্রাপ্ত কারারক্ষীদের আজীবন রেশন প্রদানের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। শারীরিক সক্ষমতা বজায় রাখতে ওয়েট চার্ট নির্ধারণ, পিটি-প্যারেড বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত এক বছরে প্রায় ১ হাজার জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
মাদকবিরোধী কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে আইজি প্রিজন বলেন, গত এক বছরে মাদকসেবন বা মাদক সংশ্লিষ্ট অপরাধে ২৯ জন সদস্যের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভোপ টেস্টিং মেশিন সংগ্রহ করে সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে।
তিনি জানান, গত এক বছরে কারা বিভাগে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ সময়ে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে কয়েকজনকে, চাকরিচ্যুত করা হয়েছে ৩৪ জনকে, বিভাগীয় শাস্তি দেওয়া হয়েছে ৪৪০ জনকে এবং ১৭২ জন কর্মকর্তাকে প্রশাসনিক কারণে বদলি করা হয়েছে।



