বর্তমানে বাজারে লিভার ডিটক্স বা ‘পরিষ্কার’-এর জন্য নানা ধরনের হারবাল পণ্য প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ধরনের বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে। বিটরুট, আমলকি, হলুদ ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদানকে লিভার পরিষ্কার করার ‘মহৌষধ’ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। অনলাইনে এসব পণ্যের হরদম বিক্রি চলছে।
তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে এই দাবি সন্দেহজনক। হারবাল বা প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহৃত হয় বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও নির্দিষ্ট মাত্রায়। কিন্তু বাজারে প্রচলিত লিভার ডিটক্স পণ্যগুলো প্রমাণিত বা নিয়ন্ত্রিত নয়। অতিরিক্ত সেবন লিভারের জন্য ক্ষতিকরও হতে পারে।
লিভার নিজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে টক্সিন পরিষ্কার করে
জন্স হপকিন্স মেডিসিনের হেপাটোলজিস্ট ড. টিনস্যে ওরেটার মতে, লিভার প্রতিদিনই শরীর থেকে টক্সিন ছেঁকে ফেলে এবং পুষ্টি উপাদান ও ওষুধকে বিপাকের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিনে পরিণত করে।
ড. ওরেটা বলেন, “বাজারে যেসব পণ্য লিভার ‘ডিটক্স’ করার দাবি করছে, সেগুলো এফডিএ নিয়ন্ত্রণাধীন নয় এবং মানসম্মত নয়। এগুলোকে উপকারী ধরা বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল।”
বাংলাদেশের ল্যাবএইড হাসপাতালের পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিম বলেন, “সুস্থ লিভারের আলাদাভাবে ডিটক্স করার প্রয়োজন নেই। লিভার স্বাভাবিকভাবে টক্সিন বের করতে সক্ষম, যদি না এটি দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
লিভার ডিটক্স পণ্যের ঝুঁকি
- নির্দিষ্ট ডোজ বা মান যাচাই ছাড়া বাজারজাত করা হয়।
- অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে অঙ্গপ্রতঙ্গ ক্ষতি বা ওষুধের সঙ্গে সংঘাত ঘটতে পারে।
- হারবাল পণ্য অন্য ওষুধের কার্যকারিতা কমাতে পারে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
ড. মো. মনিরুজ্জামান খান বলেন, “হারবাল বা ভেষজ উপাদান ব্যবহারে কোনো সমস্যা নেই, তবে নির্দিষ্ট ডোজ, মান এবং বৈজ্ঞানিক প্রমাণ থাকা জরুরি। ইচ্ছেমতো ব্যবহার ক্ষতিকর।”
কখন হারবাল পণ্য উপকারী
- লিভার বা পিত্তথলির রোগের ক্ষেত্রে কিছু উদ্ভিদ সহায়ক হতে পারে, যেমন মিল্ক থিসল।
- হলুদের নির্যাস লিভারকে ক্ষত থেকে রক্ষা করতে পারে।
- অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার, যেমন হলুদ, আদা, রসুন, গ্রিন টি ইত্যাদি লিভারের কার্যপ্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে পারে, তবে পূর্ণ ডিটক্সিফিকেশনের জন্য নির্ভরযোগ্য নয়।
লিভারের স্বাস্থ্য রক্ষার উপায়
- সুষম খাদ্যাভ্যাস: অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার।
- নিয়মিত ব্যায়াম ও ওজন নিয়ন্ত্রণ।
- পর্যাপ্ত পানি পান।
- অ্যালকোহল ও মাদক থেকে বিরত থাকা।
- ডিটক্স ডায়েট বা অতিরিক্ত হারবাল পণ্যে নির্ভর না করা।
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট হারবাল উপাদান ব্যবহার করা।
ড. টিনস্যে ওরেটার পরামর্শ, অতিভোজন বা অতিরিক্ত মদ্যপান থেকে বিরত থাকলে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করলে লিভারের কার্যক্ষমতা স্বাভাবিক থাকবে। এছাড়া হেপাটাইটিসের মতো সংক্রমণ এড়িয়ে চলাও গুরুত্বপূর্ণ।



