ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যেই দুই শতাধিক আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ‘সবুজ সংকেত’ বা প্রাথমিক অনুমোদন দিতে যাচ্ছে দলটি। পাশাপাশি প্রতিটি আসনে একক প্রার্থীর পাশাপাশি বিকল্প দুইজন করে প্রার্থী প্রস্তুত রাখার সিদ্ধান্তও নিয়েছে বিএনপি।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, এবারের নির্বাচন বিএনপির জন্য হবে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। সে কারণেই কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না দলটি। প্রার্থীদের বাছাই প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড ছাড়াও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করা হয়েছে প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা এবং জনসম্পৃক্ততা যাচাইয়ে।
নির্বাচনী প্রস্তুতির বহুমুখী কৌশল
মনোনয়নপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বিএনপির নীতিনির্ধারণী নেতারা জানান, নির্বাচনী মাঠে বিকল্প প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে। কোনো প্রার্থী মামলা বা যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়লে, কিংবা তফসিল ঘোষণার পর কোনো বিতর্কে জড়ালে বিকল্প প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। একইসঙ্গে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে—দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করলে বা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা বলেন, “আমরা চাই না কোনো আসন ফাঁকা থাকুক। এ কারণেই তিনজন করে প্রার্থী প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। প্রধান প্রার্থী ছাড়াও বিকল্প দুইজন থাকবেন, যারা দলের পক্ষ থেকে যেকোনো পরিস্থিতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন।”
তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে কঠোরতা
দলটির একাধিক সূত্র জানায়, সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়ে সরকার–নিয়ন্ত্রিত গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট ছাড়াও বিএনপির নিজস্ব উইং মাঠে কাজ করছে। একইসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থার মাধ্যমে মাঠ জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। এ জরিপে স্থানীয় জনপ্রিয়তা, সামাজিক প্রভাব, এবং ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি বিবেচনা করা হচ্ছে।
এছাড়া স্থানীয় সুশীল সমাজ, শিক্ষাবিদ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মতামতও নিচ্ছে দলটি। এমনকি যারা কেন্দ্রীয় পদে নেই ও প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা রাখেন না—তাদেরও মাঠে পাঠিয়ে নিরপেক্ষ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
নীতিনির্ধারকদের অবস্থান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রার্থীদের যোগ্যতা সম্পর্কে বলেছেন, “শুধু দলীয় সমর্থন নয়, আমরা দেখব কে এলাকার মানুষের সঙ্গে কতটা সম্পৃক্ত, কে তাদের সমস্যা বোঝে এবং সমাধান করতে পারে। নির্বাচনে জয় পেতে হলে জনসমর্থনই মূল। তাই আমরা এমন প্রার্থী বেছে নিচ্ছি, যার সঙ্গে জনগণের বাস্তব সংযোগ আছে।”
তিনি আরও বলেন, “তরুণ, নারী, মুরব্বি—সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গে যার যোগাযোগ আছে, এমন মানুষকে আমরা প্রাধান্য দেব। বিএনপি কেবল রাজনৈতিক দল নয়, এটি জনগণের প্রতিনিধিত্বের প্ল্যাটফর্ম।”
কেন্দ্রীয় পর্যায়ের তৎপরতা
ইতোমধ্যে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম। এসব বৈঠকে প্রার্থীদের ঐক্য ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে—দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “প্রার্থী তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। নির্বাচন পরিচালনা কমিটি সম্ভাব্য প্রার্থীদের কার্যক্রম পর্যালোচনা করছে। খুব শিগগিরই প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ হবে।”
অন্যদিকে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, “চলতি মাসেই আসনভিত্তিক প্রার্থীদের মাঠে কাজ করার জন্য গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হবে। তবে এটি চূড়ান্ত নয়। তফসিল ঘোষণার পর পার্লামেন্টারি বোর্ডের মাধ্যমে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হবে।”
বিকল্প প্রার্থীর কৌশল
দলীয় পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিএনপির এই বহুমাত্রিক প্রার্থী প্রস্তুতি নির্বাচনী কৌশলের অংশ। মনোনয়ন নিয়ে দলীয় অভ্যন্তরে অস্থিরতা বা আইনি জটিলতা এড়াতে বিকল্প প্রার্থী রাখার কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।
বর্তমানে ৩০০ আসনের মধ্যে অন্তত ২০০ আসনে প্রার্থীদের নাম প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। বাকি আসনগুলোতে শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।



