ভারতের গজলডোবা ব্যারেজ একতরফাভাবে গেট খোলায় তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকায় একযোগে বিপুল পানি প্রবাহিত হওয়ায় লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সোমবার রোববার সন্ধ্যায় গজলডোবা ব্যারেজের সব গেট খোলার পর নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে যায়। এতে মানুষজন গরু-ছাগল নিয়ে উঁচু এলাকায় রাত কাটাতে বাধ্য হন।
সরাসরি উপস্থিত জনসমীক্ষা অনুযায়ী দেখা গেছে, তিস্তার পানি দ্রুত বাড়তে থাকায় নতুন নতুন লোকালয়ও প্লাবিত হচ্ছে। এলাকার সড়কগুলোতে পানি প্রবাহিত হওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া পানির চাপের কারণে বিভিন্ন স্থাপনা, বসতবাড়ি ও কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কোনো ধরনের পূর্বসতর্কতা ছাড়াই ভারতের এই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বাংলাদেশের বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রও তৎপর হতে পারেনি। তিস্তা ব্যারেজের পানি পর্যবেক্ষণকারী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোববার সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপরে রেকর্ড করা হয়। রাত ৯টায় সেটি বেড়ে ৩৩ সেন্টিমিটার এবং রাত ১২টায় ৩৫ সেন্টিমিটারের ওপরে পৌঁছে।
পানিবন্দি মানুষজন জানিয়েছেন, পানি বাড়তে থাকায় তারা গরু-ছাগল নিয়ে উঁচু জায়গায় অবস্থান নিয়েছেন। অনেক পরিবার রাতভর ভুগেছেন, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীসহ পরিবারগুলো তীব্র কষ্টে পড়ে। পানিতে ভেসে গেছে ধানক্ষেত, সবজি চাষ ও পুকুরের মাছ। স্থানীয়রা বলছেন, পানি দ্রুত বাড়ায় তারা নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছেন।
লালমনিরহাটের তিস্তা ব্যারেজে ৪৪টি জলকপাট ২৪ ঘণ্টা খোলা হলেও পানি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানিয়েছেন, উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পাশাপাশি কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার বলেন, বন্যা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন সব প্রস্তুতি নিয়েছে।
তিস্তা তীরবর্তী এলাকার কৃষকরা জানিয়েছেন, রোপা আমন, চিনাবাদাম এবং সবজি চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি যদি তিন থেকে চার দিন স্থায়ী হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, বাঁধগুলোও ভেঙে যেতে পারে। আদিতমারীর সোলেদি স্পার বাঁধ-২-এর ব্রিজ অংশের নিচে গর্ত তৈরি হয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্থানীয়রা ভারতের এই পানি ছেড়ে দেওয়ার আচরণকে বারবার বন্যা সৃষ্টিকারী হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তারা বলছেন, শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকট এবং বর্ষা মৌসুমে এই ধরনের একতরফাভাবে পানি ছাড়া দেশের মানুষকে বারবার বিপদে ফেলে।
স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক করেছেন, নদীর তীরবর্তী এলাকায় থাকা মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে। পানি বৃদ্ধি ও বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।



