বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়েই গঠিত হয়েছে নতুন কমিটি। পর্যবেক্ষক ও ক্রীড়া সংশ্লিষ্টদের ভাষায়, এবারের নির্বাচনের চেয়ে “সিলেকশন” শব্দটাই বেশি মানানসই। কারণ, ভোটের আগেই কারা জিতবেন তা সবার জানা ছিল। প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল কেবল কাগজে-কলমে।
বিসিবির তিনটি ক্যাটাগরিতে এবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ক্যাটাগরি-৩ ছাড়া বাকি সব পদেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল একরকম নামমাত্র। ক্লাব কোটার (ক্যাটাগরি-২) ১২ পরিচালক পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন ১৭ জন। তবে ভোটের আগেই তিনজন প্রার্থী তাদের নাম প্রত্যাহার করেন, আর বাকি দুজন ছিলেন “ডামি প্রার্থী”। তাই আগেভাগেই জানা ছিল কারা হচ্ছেন নতুন ১২ পরিচালক।
রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে মোট ১৫৬ ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১১৫ জন। ভোট পড়েছে ৭৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। ক্যাটাগরি-১ (জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা) থেকে ভোট ছিল ৩০টি, ক্যাটাগরি-২ (ঢাকার ক্লাব) থেকে ৪২টি এবং ক্যাটাগরি-৩ (বিভিন্ন সংস্থা ও সাবেক ক্রিকেটার) থেকে ৪৩টি ভোট। এর মধ্যে একটি ভোট বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
ক্যাটাগরি-৩-এ তুলনামূলক আলোচিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট ও দেবব্রত পালের মধ্যে। তবে সেখানে লড়াই জমেনি মোটেও। ৩৫-৭ ভোটের বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন পাইলট। পরাজিত দেবব্রত পাল অভিযোগ করেছেন, “এই নির্বাচন প্রভাবিত ছিল।”
নির্বাচনের শুরু থেকেই উত্তাপহীন ছিল পুরো প্রক্রিয়া। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর থেকেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল বেশির ভাগ আসনের ফলাফল। এমনকি নির্বাচনের দিন প্রার্থীদের মধ্যেও ছিল না কোনো উদ্বেগ— অনেকে ফল জানার আগেই অভিনন্দনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন অনেকেই। ক্যাটাগরি-১ থেকে ঢাকা বিভাগের নাজমুল আবেদিন ফাহিম ও আমিনুল ইসলাম বুলবুল, খুলনা থেকে জুলফিকার আলী খান ও আব্দুর রাজ্জাক, চট্টগ্রাম থেকে আহসান ইকবাল চৌধুরী ও আসিফ আকবর, সিলেট থেকে রাহাত শামস, বরিশাল থেকে মো. শাখাওয়াত হোসেন এবং রাজশাহী থেকে মুহাম্মদ মুখলেসুর রহমান নির্বাচিত হয়েছেন। রংপুর থেকে বিজয়ী হয়েছেন মো. হাসানুজ্জামান।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মনোনয়নে পরিচালক হয়েছেন ইসহাক আহসান ও ইয়াসির মোহাম্মদ ফয়সাল আশিক।
নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই। অনেকের মতে, এটি আসলে নির্বাচন নয়, “ইলেকশনের নামে সিলেকশন।” প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকা, ই-ব্যালটের মাধ্যমে প্রভাবিত ভোট প্রক্রিয়া এবং আগেভাগে নির্ধারিত ফলাফলের কারণে এবারের নির্বাচন ক্রীড়া অঙ্গনে রসিকতার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এক ক্রীড়া বিশ্লেষকের ভাষায়, “যে প্রক্রিয়ায় ভোট হলো, তাতে ৯৯ শতাংশই অভিনয়। এই অভিনয়ের জন্য বিসিবি ও ক্রীড়া প্রশাসন যুগ্মভাবে ‘শ্রেষ্ঠ অভিনয় পুরস্কার’ পেতে পারে!”
এমন প্রহসনের মধ্য দিয়েই দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছে নতুন বিসিবি পরিচালনা পর্ষদ— যারা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিত, কিন্তু বাস্তবে নির্বাচিত হওয়ার আগেই নির্বাচিত ছিলেন।



