ময়মনসিংহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইসলাম ধর্ম ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে উসকানিমূলক মন্তব্য করায় শামীম আশরাফ নামে এক যুবককে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা এবং ধর্মপ্রাণ নাগরিকরা দ্রুত তার গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছে। তবে রহস্যজনক কারণে পুলিশ এখনও নীরব ভূমিকা পালন করছে।
জানা গেছে, সোমবার সকাল ১১টার দিকে শামীম আশরাফ তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দেন, যেখানে তিনি লিখেন, “আমার স্ট্যাটাসের ভাষাগত বৈচিত্র্য ইচ্ছে করেই আনছি। আর দুয়েকদিন গালিময় স্ট্যাটাস দেখা যাবে। মাত্র দুয়েকদিন ধৈর্য ধরুন, প্লিজ। এরপর ভালো হয়ে যামু।”
এর দুই ঘণ্টা পর তিনি আরেকটি মন্তব্য পোস্ট করেন, যা ইসলামের ধর্মীয় অনুভূতি এবং মুসলমানদের পবিত্র বিশ্বাসের প্রতি চরম অবমাননা হিসেবে দেখা দিয়েছে। তার ওই পোস্ট ছড়িয়ে পড়ার পর ময়মনসিংহের সাধারণ মানুষ ও মাদরাসা শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বিক্ষোভ শুরু করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক ক্ষোভের ঝড় ওঠে, এবং দ্রুত তার গ্রেপ্তারের দাবি ওঠে।
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আবদুল্লাহ আল-মামুন জানান, “আলেম ও উলামারা বিষয়টি নিয়ে শহরজুড়ে বিক্ষোভ করেছে। তাদের পক্ষ থেকে কেউ অভিযোগ দিলে তখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলেছেন, গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট থাকা সত্ত্বেও কেন পুলিশ এখনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
সূত্রের বরাতে জানা গেছে, শামীম আশরাফ দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সক্রিয় ছিলেন। তার মালিকানাধীন ‘গ্রাফিটি’ নামের ডিজাইন প্রতিষ্ঠান থেকে আওয়ামী লীগের প্রচারণা, ব্যানার ও ফেস্টুন তৈরি হতো। বিভিন্ন সময় তিনি আওয়ামী নেতাদের প্রশংসা করেছেন এবং বিএনপি–জামায়াতবিরোধী পোস্টও করেছেন। ২০২৩ সালে প্রকাশিত ‘মুজিব শত কবিতাসূত্র’ বইয়ের প্রচ্ছদও তার ডিজাইন করা।
অভিযোগ রয়েছে, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে প্রভাব বিস্তারের জন্য তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল এবং মহানগর সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্তের ঘনিষ্ঠতা ব্যবহার করেছেন। ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনকে বিভক্ত করে তিনি নিজের প্রভাব বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন।
স্থানীয় সাংস্কৃতিক মহল ও নাগরিকরা জানিয়েছেন, সরকারের পতনের পর শামীম আশরাফ রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তন করে নতুন শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। এমন পরিস্থিতিতে তিনি জনমনের ক্ষোভ ও সামাজিক উত্তাপ সৃষ্টি করেছেন।
ধর্মীয় উসকানিমূলক মন্তব্যের পর সাধারণ মানুষ, ধর্মীয় সংগঠন ও নেটিজেনরা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যে, ধর্ম, বিশ্বাস ও সমাজের স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য এই ধরনের অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তারা বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, আইন ও ন্যায়ের ভিত্তিতে বিচার না হলে সামাজিক স্থিতি ও ধর্মীয় সহাবস্থান চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ময়মনসিংহের নাগরিকরা আশাবাদী যে প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নেবে এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা এই ধরনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি রোধ করবে।



