ঢাকা: জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন এবং গণভোট আয়োজনের সময় ও বিষয়বস্তু নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তা নিরসনে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছানোর অনুরোধ করেছে সরকার। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল আজ সোমবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান।
আজ সকাল ১০টায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাজধানীর তেজগাঁও কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের এই জরুরি বৈঠক শুরু হয়।
ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত চান প্রধান উপদেষ্টা
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল লিখিত বক্তব্যে বলেন, সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কর্তৃক প্রণীত জুলাই সনদ (সংবিধান সংস্কার) আদেশের চূড়ান্তকরণ এবং গণভোট আয়োজন নিয়ে আলোচনা হয়। তিনি উল্লেখ করেন, ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘদিন আলোচনার পরও কয়েকটি সংস্কারের সুপারিশে ভিন্ন মত রয়েছে এবং গণভোট কবে হবে ও এর বিষয়বস্তু কী হবে, তা নিয়েও দলগুলোর মধ্যে মতভেদ দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতি নিয়ে সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
আইন উপদেষ্টা জানান, এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে দ্রুততম সময়ে (সম্ভব হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে) সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এমন নির্দেশনা পেলে সরকারের পক্ষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক সহজ হবে। তিনি হুঁশিয়ারি দেন যে, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে কালক্ষেপণের যে কোনো সুযোগ নাই সেটাও আমাদের সবার বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন।’
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত
সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেন।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ কবে জারি হতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করেছে। ওনাদের কিছু সময় দিতে চাই। যেসব বিষয় উল্লেখ করেছি সেগুলোতে ওনারা আলোচনা করে একমত হতে পারেন কিনা আমরা দেখি।’
দলগুলো একমত না হলে সরকার কী করবে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা অপেক্ষা করব, তারপর অবশ্যই সরকার সরকারের মতো অ্যাক্ট (পদক্ষেপ) নেবে।’
সরকারের নতি স্বীকার নয়, সুপারিশ প্রত্যাশা
সরকার কি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নতি স্বীকার করেছে—এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমি বলেছিলাম চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদ। এ সিদ্ধান্ত থেকে আমরা মোটেও সরে আসি নাই। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ঐক্যবদ্ধ সুপারিশ প্রত্যাশা করা ইতিবাচক হিসেবে দেখতে পারেন।’
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার আয়োজন সরকার করে দেবে কিনা—এ প্রশ্নে তিনি বলেন, সরকার আর কোনো আয়োজন করতে যাচ্ছে না। তিনি প্রত্যাশা করেন, ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো গত ১৫ বছর নিজেরা নিজেরা আলোচনা করে বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন…এখন ওনারা নিজ উদ্যোগে আলোচনা করে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নেবেন, এ প্রত্যাশা করছি।’ তিনি গতকাল জামায়াতের পক্ষ থেকে বিএনপিকে আলোচনার আহ্বান জানানোকে স্বাগত জানান।



