শুক্রবার, নভেম্বর ২১, ২০২৫
spot_img
Homeআন্তর্জাতিকনিউইয়র্কের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র জোহরান মামদানি

নিউইয়র্কের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র জোহরান মামদানি

যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ও প্রভাবশালী শহর নিউইয়র্কের ১১১তম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানি। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা মামদানি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, কারণ তিনিই প্রথম মুসলিম যিনি এই শহরের মেয়র পদে নির্বাচিত হলেন। তিনি সাবেক গভর্নর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুওমো এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে পরাজিত করে এই জয় অর্জন করেছেন।

নির্বাচনটি ছিল নাটকীয় ও অপ্রত্যাশিত মোড়ে ভরা। মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। শেষ মুহূর্তে ভোটের মাঠে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে, যখন ডেমোক্রেটিক মনোনয়ন হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া অ্যান্ড্রু কুওমোকে সমর্থন ঘোষণা করেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প নিজ দলের প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে উপেক্ষা করে কুওমোকে সমর্থন জানান, যা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লেখেন, “আপনি কুওমোকে পছন্দ করুন বা না করুন, এখন তাঁকেই ভোট দিতে হবে। মামদানি নয়।”

এ সমর্থনের পেছনে ছিল রাজনৈতিক কৌশল। মেয়র থাকাকালে কুওমো ও ট্রাম্পের মধ্যে সম্পর্ক ছিল শত্রুতাপূর্ণ। কিন্তু নির্বাচনের আগ মুহূর্তে ট্রাম্পের এই সমর্থন অনেকের কাছে বিভ্রান্তিকর মনে হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি ছিল মামদানির জনপ্রিয়তা ঠেকাতে ট্রাম্পের মরিয়া চেষ্টা।

মামদানি ট্রাম্পের মন্তব্যের কড়া জবাব দেন। তিনি বলেন, কুওমোকে সমর্থন করেছেন ট্রাম্প ও তাঁর দল, যা প্রমাণ করে কুওমো নিউইয়র্কের নয়, বরং ট্রাম্প প্রশাসনের মেয়র হবেন। তিনি আরও বলেন, নিউইয়র্কের মানুষের কাছে এই হুমকি ও কৌশল ব্যর্থ হবে।

ভোটের দিন সকালেই কুইন্সের অ্যাস্টোরিয়ার একটি ভোটকেন্দ্রে ভোট দেন মামদানি ও তাঁর স্ত্রী রামা দুয়াজি। আগাম ভোট দিয়েছিলেন সাত লাখ ৩৫ হাজার ভোটার, যা ২০২১ সালের নির্বাচনের তুলনায় চারগুণ বেশি। এবারের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। নিউইয়র্কের অভিবাসী ও শ্রমজীবী শ্রেণি ব্যাপকভাবে মামদানির পক্ষে ভোট দেন।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, শেষ মুহূর্তের প্রচারণা ছিল অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ। একদিকে অভিবাসীদের প্রতিনিধি মামদানি, অন্যদিকে কুওমো ও রিপাবলিকান ঘরানার প্রার্থীরা। কুওমোর বিরুদ্ধে একাধিক যৌন হয়রানির অভিযোগ এবং তাঁর অতীতের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডও ভোটারদের মধ্যে প্রভাব ফেলেছে।

মামদানি উগান্ডা থেকে আগত অভিবাসী বাবা-মায়ের সন্তান। তিনি নিউইয়র্কে বড় হয়েছেন এবং বহু বছর ধরে শহরের স্বল্প আয়ের ও প্রবাসী জনগোষ্ঠীর পক্ষে কাজ করছেন। তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মধ্যে ছিল বিনামূল্যে শিশুসেবা, ছোট ব্যবসায়িক উদ্যোগে সহায়তা এবং সাশ্রয়ী আবাসনের সুযোগ। অনেক ভোটার জানান, মামদানির বাস্তবধর্মী ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিই তাঁদের তাকে বেছে নিতে অনুপ্রাণিত করেছে।

সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় স্থানীয় নির্বাচন। নিউইয়র্ক, ভার্জিনিয়া ও নিউ জার্সির গভর্নর নির্বাচনসহ এই ভোটগুলো ট্রাম্প ও তাঁর দলের জনপ্রিয়তার জন্য বড় পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। একই সময়ে ফেডারেল সরকারের অচলাবস্থা বা শাটডাউন ৩৫তম দিনে পৌঁছেছে, যার ফলে হাজারো সরকারি কর্মী আর্থিক কষ্টে রয়েছেন। এই পটভূমিতে মামদানির জয় অনেকের কাছে নতুন নেতৃত্বের উত্থান হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জোহরান মামদানির বিজয় শুধু একটি নির্বাচনী ফল নয়; এটি মার্কিন রাজনীতিতে বৈচিত্র্য, অভিবাসী অংশগ্রহণ এবং প্রগতিশীল মূল্যবোধের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments