আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক সমীকরণ জটিল হচ্ছে। বিএনপি ইতিমধ্যে নিজেদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে, তবে কিছু আসন ইচ্ছাকৃতভাবে ফাঁকা রেখেছে। জামায়াতে ইসলামী প্রার্থীদের মাঠে নামালেও এখনো চূড়ান্ত তালিকা দেয়নি। এই প্রেক্ষাপটে আলোচনায় এসেছে জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)—তারা কি বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে জোটে যাচ্ছে?
এনসিপির নেতারা বলছেন, বড় দলের সঙ্গে সরাসরি জোট নয়, বরং আসন সমঝোতার পথ খোলা রেখেছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, এর পেছনে দুটি কারণ আছে। প্রথমত, বিএনপি ও জামায়াতের অতীত রাজনৈতিক দায়ভার ভাগাভাগি করতে চায় না এনসিপি। দ্বিতীয়ত, বড় দলের সঙ্গে জোটে গেলে নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় ও দৃশ্যমানতা ঢাকা পড়ে যায়। তাই দলটি এখন বরং ছোট দলগুলোর সঙ্গে জোট গড়ে আলাদা শক্তি হয়ে ওঠার কৌশল বিবেচনা করছে।
দলের মুখ্য সমন্বয়ক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “যারা সংস্কার বাস্তবায়নের পথে যাবে, আমরা তাদের সঙ্গেই জোটে যেতে পারি। যারা সংস্কারের বিপক্ষে, তাদের সঙ্গে কোনো জোট হবে না।”
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপি-জামায়াতসহ ছোট-বড় কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এখনো আলোচনা চলছে। আগামী ৭ নভেম্বরের নির্বাহী কাউন্সিল বৈঠকে এনসিপি নির্বাচনী মনোনয়ন ও জোট–সম্পর্কিত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। গণতন্ত্র মঞ্চের কয়েকটি দল ও এবি পার্টির সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা চলছে বলেও জানা গেছে।
এনসিপি ৭০ থেকে ১০০টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যদিও আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, তাদের লক্ষ্য ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়া। দলের নেতাদের মতে, অন্তত ১৭০–১৮০ আসনে এনসিপির প্রার্থী নিশ্চিত করা হবে।
যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, “আমাদের প্রার্থী তালিকায় অনেক চমক আসছে। এনসিপি এবার গেম চেঞ্জার হবে। যারা তথাকথিত ‘আন্ডার ডগ’, তারা এবার ‘সুপার ডগদের’ পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাবে।”
রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন রয়েছে, বিএনপি এনসিপির শীর্ষ কয়েকজন নেতার এলাকায় প্রার্থী দেয়নি, যা দুই দলের মধ্যে নীরব সমঝোতার ইঙ্গিত হতে পারে। তবে এই দাবি অস্বীকার করেছেন দলের যুগ্ম সদস্যসচিব সালেহ উদ্দিন সিফাত। তাঁর ভাষায়, “বিএনপি ২৩৭ আসনে প্রার্থী দিয়েছে, ৬৩টি আসন এখনো ফাঁকা আছে—এর মধ্যে ঢাকা–৯, ঢাকা–১০ ও লক্ষ্মীপুর–১ রয়েছে। কেউ কেউ ভুলভাবে প্রচার করছে যে বিএনপি এসব আসন এনসিপিকে ছেড়ে দিয়েছে। এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”
নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এখন এনসিপির কৌশল স্পষ্ট—বড় দলের ছায়া এড়িয়ে নিজেদের স্বতন্ত্র রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া। একইসঙ্গে ছোট দলগুলোর সঙ্গে গঠনমূলক জোট করে ভোটের মাঠে বিকল্প প্রগতিশীল শক্তি হিসেবে জায়গা করে নেওয়ার পরিকল্পনাও এগিয়ে নিচ্ছে তারা।



