ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্তব্য ঘিরে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ‘বন্দে মাতরম’ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক। কবিতা রচনার ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কবিতার পূর্ণ সংস্করণ পাঠ করে কংগ্রেসের সমালোচনা করেন তিনি। মোদির অভিযোগ, কংগ্রেস ১৯৩৭ সালে ‘সম্প্রদায়তান্ত্রিক তোষণের’ কারণে কবিতার কিছু অংশ বাদ দিয়ে অসম্পূর্ণ সংস্করণকে জাতীয় পরিচয়ের গান হিসেবে গ্রহণ করে দেশকে অসম্মান করেছে।
‘বন্দে মাতরম’-এর বাদ দেওয়া অংশে হিন্দু দেবী দুর্গা, লক্ষ্মী ও সরস্বতীর উল্লেখ থাকায় কংগ্রেস তৎকালীন সময়ে তা পরিহার করে। মোদির বক্তব্যের জেরে বিজেপি প্রকাশ করেছে ১৯৩৭ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে জওহরলাল নেহরু ও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মধ্যে বিনিময় হওয়া চিঠিপত্র, যেখানে নেহরু লিখেছিলেন—“বন্দে মাতরম-এর পটভূমি মুসলমানদের বিরক্ত করতে পারে।”
বিজেপির দাবি, কংগ্রেসের এ সিদ্ধান্তই দেশের বিভাজনবাদী রাজনীতির সূচনা করে। মোদি বলেন, “এই অংশ বাদ দেওয়াই দেশের বিভাজনের বীজ বপন করেছিল।”
অন্যদিকে, কংগ্রেস পাল্টা অভিযোগ করে বলেছে, যারা আজ জাতীয়তাবাদের মুখোশ পরে ঘোরে, সেই বিজেপি ও আরএসএস বরাবরই ‘বন্দে মাতরম’ এড়িয়ে চলে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, “আজ যারা নিজেদের জাতীয়তাবাদের রক্ষক বলে দাবি করছে, তারাই কোনোদিন বন্দে মাতরম গাননি।”
বিতর্কে যোগ দিয়ে সমাজবাদী পার্টির বিধায়ক আবু আজমি বলেন, “আমাকে কেউ জোর করে বন্দে মাতরম গাওয়াতে পারবে না। আমি এক আল্লাহকে মানি।”
১৮৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচনা করেন ‘বন্দে মাতরম’। ছয় স্তবকের এই গীতিকবিতায় তিনি ভারতভূমিকে মাতৃরূপে কল্পনা করে মাতৃশক্তির বন্দনা করেছেন। ১৯৩৭ সালের কংগ্রেস অধিবেশনে সিদ্ধান্ত হয়—জাতীয় অনুষ্ঠানে কেবল প্রথম দুটি স্তবকই গাওয়া হবে, কারণ পরের অংশ মুসলমান সমাজের একটি অংশের কাছে অগ্রহণযোগ্য ছিল।
প্রায় ৯০ বছর পরও সেই সিদ্ধান্ত ঘিরে ভারতীয় রাজনীতি উত্তপ্ত। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশপ্রেম ও সাম্প্রদায়িকতা ঘিরে নতুন করে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়েছে—আর তার কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে আবারও ‘বন্দে মাতরম’।



