জুলাই সনদ ও গণভোট নিয়ে সৃষ্ট মতভেদ নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোকে সময়সীমা বেঁধে দেওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, “এত শক্তি প্রদর্শন আপনাদের মানায় না। আপনারা কোনো নির্বাচিত সরকার নন, এটা মনে রাখবেন।”
শনিবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ছাত্রদল আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রেফারির ভূমিকা পালন করবে। অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে। অথচ এখন আপনারা রেফারি হয়ে নিজ হাতে একদলীয় সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন এবং বলছেন—রাজনৈতিক দলগুলোকে সাত দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, না হলে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। এটি আপনারদের এখতিয়ারের বাইরে।”
বিএনপির এই নেতা বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার কোনো নির্বাচিত সরকার নয়। আমাদেরকে আদেশ করার এখতিয়ার আপনাদের নেই। সাত দিনের আলটিমেটাম দিয়ে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া অগণতান্ত্রিক আচরণ।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি হিসেবে সম্পর্ক রাখি—সেটা এনসিপি হোক, জামায়াত হোক বা অন্য যে কোনো দল। তবে আলোচনার জন্য কোনো নির্দিষ্ট দলকে রেফারি বানানো গ্রহণযোগ্য নয়।”
জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “আপনারা ১৯৭১ সালে উল্টো পথে হেঁটেছিলেন, ১৯৪৭ সালেও বিপরীত পথে ছিলেন। এখন যদি আবার আওয়ামী লীগের হাত ধরে পুনরুত্থান চান, তার পরিণতি ভালো হবে না। এতে কেবল ফ্যাসিস্ট শক্তিই উৎসাহিত হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আপনারা খেতে চান, খান। কিন্তু জনগণের ভাত ছিনিয়ে নিতে চাইলে, বাংলাদেশের মানুষ আর সেটা মেনে নেবে না।”
জামায়াতের নায়েবে আমিরের সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “আপনারা সরকারকে ১১ তারিখ পর্যন্ত আলটিমেটাম দিয়েছেন। কিন্তু সরকার তো আপনাদের পক্ষেই অবস্থান নিচ্ছে। তাহলে এই আলটিমেটাম কার জন্য?”
দেশে গণভোটের প্রয়োজন নেই বলে স্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করে বিএনপির এই নেতা বলেন, “গণভোটের মধ্য দিয়েই সংবিধান পরিবর্তন হয়ে যাবে—এটা অনৈতিক। সংসদ নির্বাচনের দিন ছাড়া আলাদা গণভোটের কোনো প্রয়োজন নেই।”
আগামী ১৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচির সমালোচনা করে সালাহউদ্দিন বলেন, “১৩ তারিখ শেখ হাসিনার বিচার নিয়ে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার কথা। আর সেই দিনই লকডাউন? এটা পাগলের সুখ মনে মনে। ফ্যাসিস্ট পতনের পথে থাকা আওয়ামী লীগের সঙ্গে কেউ থাকলে, জনগণ তাদের বিচার করবে।”
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, “ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তৃত হচ্ছে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য আসছে। যারা দেশকে অস্থিতিশীল করে ভারতের স্বার্থ রক্ষা করছে, ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না।”
সভায় সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম। পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায়সহ অন্যান্য নেতারা।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করেছি নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশায়। কিন্তু যদি তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আঁতাত করে, তাহলে আমরা রাজপথে কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।”



