বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে চলমান আন্দোলন নিয়ে মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রশাসন ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে টানা সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আলোচনার ফলাফলে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সিন্ডিকেট সভা ডেকে হল বন্ধের নোটিশ প্রত্যাহার করা হবে। এছাড়া আন্দোলনে অংশ নেয়া কোনো শিক্ষার্থীকে শাস্তির আওতায় আনা হবে না। তবে, বহুল আলোচিত একক কম্বাইন্ড ডিগ্রির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ. কে. ফজলুল হক ভূঁইয়া অনলাইনে (জুম প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে) যুক্ত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. শহীদুল হক, সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক সোনিয়া সেহেলী, কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানসহ তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী আলোচনায় অংশ নেন।
আলোচনা শেষে ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. শহীদুল হক জানান, সিন্ডিকেট সভায় হল বন্ধের নোটিশ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করা হবে। তিনি বলেন, “আগামী সাত দিনের মধ্যে ক্লাস ও পরীক্ষা শুরুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে।”
কম্বাইন্ড ডিগ্রির বিষয়ে তিনি বলেন, “অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের আগের তিন ডিগ্রির সিদ্ধান্তই বহাল আছে। তবে এটি নিয়ে সামনে আরও আলোচনা হবে।” শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, “তদন্ত কমিটির নোটিশে কোনো উল্লেখ না থাকলেও হামলাসহ যা ঘটেছে সবকিছুই তদন্তের আওতায় আসবে।”
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এহসানুল হক হিমেল বলেন, “স্যারদের সাথে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আগামীকাল সিন্ডিকেট মিটিংয়ের মাধ্যমে হল বন্ধের আদেশ প্রত্যাহার হবে এবং আগামী সাতদিনের মধ্যে ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হবে। তাই আমরা আগামীকাল কোনো আন্দোলন কর্মসূচি রাখছি না। তবে একক কম্বাইন্ড ডিগ্রির বিষয়ে পরবর্তী আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে আবার আন্দোলনে ফিরে যাবো।”
আন্দোলনকারী মো. শিবলী সাদী বলেন, একক কম্বাইন্ড ডিগ্রির বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেছেন, আন্দোলনকারীদেরকে অ্যাকাডেমিক বা হলভিত্তিক কোনো শাস্তি দেওয়া হবে না। তিনি লিখিতভাবেও এ বিষয়ে আশ্বাস দেবেন।
প্রসঙ্গত, রোববার (৩১ আগস্ট) অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় একক কম্বাইন্ড ডিগ্রির বিষয়ে সমাধান না আসায় শিক্ষার্থীরা মিলনায়তনে উপাচার্যসহ প্রায় ২০০ শিক্ষক-কর্মকর্তাকে তালাবদ্ধ করেন। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বহিরাগতদের হামলার ফলে অন্তত ১০ জন আহত হন।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় রোববার রাত সাড়ে ৯টায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যায়।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, হল ত্যাগের নির্দেশ প্রত্যাহারসহ ছয় দফা দাবিতে সোমবার থেকে বাকৃবি ক্যাম্পাসে উত্তাল অবস্থা ছিল। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) তারা রেললাইন অবরোধ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যালয় ও ব্যাংক শাখায় তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেছেন।



