ঢাকা: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রশ্নে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রধান দুই দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী স্পষ্টতই মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের গতকাল রোববার (২ নভেম্বর) বিএনপির বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন যে, তাদের ‘ভেতরে-ভেতরে আবার ফ্যাসিস্ট হওয়ার একটা খায়েশ আছে’।
জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা আয়োজিত এক সেমিনারে সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, তাদের প্রস্তাব ছিল প্রধানমন্ত্রী ও দলের প্রধান একজন হতে পারবেন না এবং কোনো ব্যক্তি একাধারে ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপি এই সংস্কার প্রস্তাবগুলোতে দ্বিমত পোষণ করেছে, যা প্রমাণ করে যে তাদের ‘আবারও স্বৈরাচার হওয়ার একটা চিন্তাভাবনা মাথায় আছে’। তিনি হুঁশিয়ারি দেন যে, নতুন করে যারা ফ্যাসিস্ট হওয়ার চেষ্টা করছে, তাদের পরিণতি ভালো হবে না।
এই বক্তব্যের পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা বেড়েছে। বিশেষ করে নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন আরপিওর ২১ ধারার সংশোধনী পরিবর্তন নিয়ে দুই দলের মধ্যে তীব্র বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে আগে স্থির করা হয়েছিল যে জোটগত নির্বাচন হলেও নিজ দলের প্রতীকেই ভোট করতে হবে। জামায়াত এই সিদ্ধান্তে খুশি হলেও, বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর দাবির মুখে সরকার সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। জামায়াত এটিকে বিএনপির চাপে সরকারের নতি স্বীকার হিসেবে দেখছে এবং তারা ক্ষুব্ধ।
তবে বিএনপি মনে করছে, জামায়াত নির্বাচন পেছাতে চায়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গতকাল রোববার সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে বলে নিশ্চিত করেছে এবং বিএনপি সে অনুযায়ী নির্বাচনমুখী সব কার্যক্রম চালাচ্ছে। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারকে যতটুকু সহযোগিতা করা দরকার, বিএনপি ততটুকু করবে।
অন্যদিকে, জামায়াত নেতা সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের গতকাল সন্ধ্যায় অন্য এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপিকে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপি যতই উসকানি দিক, জামায়াত বিএনপির সঙ্গে বিরোধে জড়াতে চায় না… আসুন আমরা সব ভুলে আলোচনায় বসি।’ তিনি দেশের এই পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলার জন্য বিএনপিকে আনুষ্ঠানিক আলোচনার আহ্বান মিডিয়ার মাধ্যমে জানিয়েছেন।
এদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এই পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করেছেন যে, ‘এক দল (বিএনপি) সংস্কারকে ভেস্তে দিচ্ছে, আরেক দল (জামায়াত) নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা করছে।’
সামগ্রিকভাবে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, গণভোটের সময় এবং আরপিও সংশোধনী নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে এবং নির্বাচনকে ঘিরে তৈরি হওয়া ঐক্যে ফাটল দেখা দিয়েছে।



