জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১। সোমবার দেওয়া রায়ে মামলার আরেক আসামি, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধেও মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়েছে।
তৃতীয় আসামি ও মামলার রাজসাক্ষী, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তিনজনের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে বিভিন্ন অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণিত হয়েছে জানায় ট্রাইব্যুনাল।
এটি জুলাই গণ–অভ্যুত্থান–সম্পর্কিত হত্যাকাণ্ডের মামলাগুলোর প্রথম রায়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রায় পড়া শুরু হয়, যা মোট ৪৫৩ পৃষ্ঠায় সাজানো হয়েছে। রায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এজলাস থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন।
তিন আসামির অবস্থা
মামলার প্রধান আসামি শেখ হাসিনা ও দ্বিতীয় আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান—দুজনই পলাতক এবং বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন স্থানে আছেন বলে মামলার নথিতে উল্লেখ রয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া একমাত্র আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন আদালতে দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।
তাঁর জবানবন্দিতে তিনি দাবি করেন—২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলন দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন এবং তিনি সেই নির্দেশ তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে পেয়েছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষের দাবি
শুনানিতে প্রসিকিউশন একাধিকবার জানান—জুলাই মাসের ঘটনাবলীর সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও হামলার পরিকল্পনা, নির্দেশ এবং বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছিলেন শেখ হাসিনা। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেই সময়ের অভিযানে নিরস্ত্র ছাত্র–জনতার বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে।
রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির অনুরোধ জানায় এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আবেদনও করে। অন্যদিকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীরা আসামিদের খালাস চেয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন।
রেড নোটিশের উদ্যোগ
প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম জানান—যদি দণ্ডাদেশ বহাল থাকে, তবে পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির জন্য ‘কনভিকশন ওয়ারেন্ট’ পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
এর আগের সাজা
দুর্নামজনিত আদালত অবমাননার একটি মামলায় চলতি বছরের ২ জুলাই শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল–১।



