জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি এখনো চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা না করলেও ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম প্রকাশের পরই দলে ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের সমর্থকেরা বিক্ষোভ, পদযাত্রা ও সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছেও অভিযোগপত্র জমা পড়েছে।
দলীয় নীতিনির্ধারকেরা অবশ্য বিষয়টিকে বড় দলে স্বাভাবিক মনোনয়ন–রাজনীতি হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন। তারা জানান, অসন্তোষ কমাতে এবং সাংগঠনিক ক্ষতি ঠেকাতে পুরো প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনা চলছে। ইতোমধ্যে অন্তত ৩০টি আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দিকেই ঝুঁকছে দল।
কোন বিভাগে কত আসনে ক্ষোভ?
মাঠপর্যায়ের রিপোর্ট অনুযায়ী মনোনয়ন নিয়ে অসন্তোষ দেখা গেছে ৭০টি আসনে। বিভাগওয়ারি হিসাব—
- ঢাকা বিভাগ: ১৪ আসন
- চট্টগ্রাম: ১১ আসন
- রাজশাহী: ১১ আসন
- ময়মনসিংহ: ১০ আসন
- রংপুর: ১০ আসন
- খুলনা: ১০ আসন
- বরিশাল: ৩ আসন
- সিলেট: ১ আসন
অসন্তোষের কারণ কী?
বঞ্চিত নেতাদের অভিযোগ—
অনেকে নবাগত, হাইব্রিড, সুবিধাভোগী, আন্দোলনে অদৃশ্য, প্রবাসী বা বয়সে অতিবৃদ্ধ হয়েও মনোনয়ন পেয়েছেন।
অন্যদিকে ত্যাগী, জনপ্রিয় ও দীর্ঘদিন শ্রম দেওয়া নেতাদের বাদ দেওয়া হয়েছে।
যদিও দলীয়ভাবে জানানো হয়েছে—
এ তালিকা চূড়ান্ত নয়, পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে।
তবুও ক্ষোভ কমেনি।
বিভিন্ন আসনে উত্তেজনা ও সংঘর্ষ
ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর)
মনোনীত প্রার্থী এম ইকবাল হোসেনকে পরিবর্তনের দাবিতে তায়েবুর রহমানের সমর্থকেরা ধারাবাহিক বিক্ষোভ করছেন।
দুই পক্ষের সংঘর্ষে প্রাণহানিও ঘটেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪
৯০ বছর বয়সী সাবেক এমপি মুশফিকুর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া।
তার বিরুদ্ধে অসুস্থতা, বয়স ও অতীত সরকারের সঙ্গে সখ্যতার অভিযোগ উঠেছে।
কুষ্টিয়া-৪
৮০–এর বেশি বয়সী সাবেক এমপি সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমিকে মনোনয়নে ক্ষুব্ধ স্থানীয় তরুণ নেতৃত্ব।
তারা বলেন, এতে ভোটে ক্ষতি হবে।
ঢাকা-৫ ও ঢাকা-১৪
ঢাকা-৫–এ নবীউল্লাহ নবীকে নিয়ে বিতর্ক।
ঢাকা-১৪–এ সানজিদা ইসলাম তুলির পরিবর্তন দাবি করছেন এস এ সিদ্দিক সাজুর সমর্থকেরা।
সাজুর দাবিতে ১২৬ জন নেতা লিখিত আবেদন দিয়েছেন তারেক রহমানকে।
চট্টগ্রাম-১২
এস আলম গ্রুপের গাড়িচাপা ঘটনার পর বহিষ্কৃত এনামুল হককে মনোনয়ন—এ নিয়ে বিরোধ।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, তিনি সরকারের লোকজনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
গাইবান্ধা-৪
এক-এগারোর সময় সংস্কারপন্থী ছিলেন—এই অভিযোগে শামীম কায়সার লিঙ্কনকে মানতে পারছেন না স্থানীয়রা।
তারা চান ফারুক আহমেদকে প্রার্থী করা হোক।
নেত্রকোনা-৫
মনোনীত প্রার্থী আবু তাহের তালুকদারের বিরুদ্ধে নৈতিক অবক্ষয়ের ভিডিও ফাঁস—এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা।
নরসিংদী-৪
সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলকে নিয়ে ক্ষোভ—
অভিযোগ: তিনি এক-এগারোতে সংস্কারপন্থী ছিলেন, জিয়া পরিবারকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেছেন।
নাটোর-১
ফারজানা শারমিন পুতুলকে মনোনয়ন দেওয়ায় তাঁর বড় ভাই ইয়াসির আরশাদ রাজন নিজেই আন্দোলনে নেমেছেন।
দলীয় পদক্ষেপ: পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রচেষ্টা
গত সোমবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মনোনয়ন–বিষয়ক বিতর্ক নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়।
লন্ডন থেকে যুক্ত হয়ে তারেক রহমান বিতর্কিত প্রার্থীদের পরিবর্তনে সম্মতি জানান।
অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে—
সিলেট-৬, নেত্রকোনা-৫, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪, জামালপুর-২, কুষ্টিয়া-৪, সিরাজগঞ্জ-৩, চট্টগ্রাম-১২ ও ১৩
সহ অন্তত ৩০টি আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের আলোচনা হয়েছে।
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ও স্থায়ী কমিটির সদস্যরা প্রতিটি বিতর্কিত আসনের উভয় পক্ষকে ঢাকায় ডেকে কথা বলছেন।
মনোনয়ন–বঞ্চিত নেতাদের সঙ্গেও পৃথকভাবে আলোচনা করা হচ্ছে।
তারেক রহমানও সরাসরি অসন্তোষে থাকা নেতাদের ফোন করে কথা বলছেন, কারণ
দল বিভক্ত অবস্থায় নির্বাচনে যেতে চান না তিনি।



